বিদ্যাপতি ঠাকুর ছিলেন এক বিশিষ্ট মৈথিলি কবি। পঞ্চদশ শতাব্দীতে তাঁর ব্রজবুলি ভাষায় রচিত বৈষ্ণব পদাবলি বঙ্গদেশের বৈষ্ণবসমাজে ব্যাপক প্রচার ও জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফলে এই রাধাকৃষ্ণ-বিষয়ক পদগুলি বাংলা বৈষ্ণব সাহিত্যে মহাজন পদাবলির অঙ্গীভূত হয়। আজও বাংলায় বিদ্যাপতির পদ বাংলা সাহিত্যের অঙ্গ হিসেবে পরিগণিত হয়।
কৌলিক উপাধি : ঠক্কর বা ঠাকুর
জন্ম : বিহারের দ্বারভাঙা জেলার মধুবনী পরগনার অন্তর্গত বিসফী গ্রামে।
আবির্ভাব : চতুর্দশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। ( ১৩৫৮/ ১৩৪৭/ ১৩৮০/ ১৩৯০ - নানা মতান্তর রয়েছে)
পিতা : গণপতি ঠাকুর
কন্যা : দুলহা
পুত্র : হরপতি, নরপতি ও বাচ্যপতি
পুত্রবধূ : চন্দ্রকলা
উপাসক : বিদ্যাপতি শৈব ছিলেন,কারো কারো মতে তিনি পঞ্চোপাসক (শৈব, গাণপত্য, বৈষ্ণব, শাক্ত, সৌর) ছিলেন।
তিরোধান : গঙ্গাতটে । (১৪৪৮/ ১৪৫৬/ ১৪৬০ - মতান্তর রয়েছে)। মোটামুটি পঞ্চদশ শতকের প্রথমার্ধের কিছু পর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
পৃষ্ঠপোষক রাজা ও তাঁদের রাজত্বকালে লিখিত রচনা :
দেবসিংহ- 'ভূ-পরিক্রমা
কীর্তিসিংহ- 'কীর্তিলতা'
শিবসিংহ -' কীর্তিপতাকা', "পুরুষ পরীক্ষা"
পদ্ম সিংহ ও বিশ্বাসদেবী - 'শৈবসর্বস্বহার', 'গঙ্গাবাক্যাবলী
নরসিংহ ও ধীরমতি দেবী -'দানবাক্যাবলী, বিভাগ সার
পুরাদিত্য -' লিখনাবলী'
ভৈরবসিংহ -' দুর্গাভক্তি তরঙ্গীনি '
দেবসিংহ এর অনুরোধে বিদ্যাপতি কাব্যচর্চা শুরু করেন।
বিদ্যাপতির প্রথম রচিত গ্রন্থ ভূপরিক্রমা।
বিদ্যাপতি তার অধিকাংশ পদাবলী শিবসিংহ র রাজ সভায় থাকাকালীন রচনা করেন।
বিদ্যাপতি মিথিলার কামেশ্বর রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন ।
বিদ্যাপতি প্রথম রাজা ভোগীশ্বর পৃষ্ঠপোষকতা অর্জন করেছিলেন।
বিদ্যাপতি ভারতীয় সাহিত্য ভান্ডারের গাথাসপ্তশতী, অমরুশতক, শৃঙ্গারতিলক, শৃঙ্গারশতক গ্রন্থ থেকে ঋণ গ্রহণ করেছেন।
বিদ্যাপতির দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী গ্রন্থের প্রভাব আজও বর্তমান। এখনো বঙ্গদেশে এই গ্রন্থ মেনে দুর্গাপূজা হয়।
1875 খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় সর্বপ্রথম বলেন বিদ্যাপতি বাঙালি নয়।
জন বিমস এর মতে বিদ্যাপতি মিথিলার লোক।
জন বিমস এর মতে বিদ্যাপতির প্রকৃত নাম বসন্ত রায়।
রাজকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বিদ্যাপতি কে মৈথিল কোকিল অভিধায় অভিহিত করেন।
রাজা শিবসিংহ বিদ্যাপতি কে অভিনব জয়দেব উপাধি প্রদান করেন।
"নব কবি শেখর" উপাধিটি বিদ্যাপতির ।
রসিকসভাভূষন সুখকন্দ বিদ্যাপতি র উপাধি।
বিদ্যাপতি মোট ছয়জন রাজা ও একজন রানীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন ।
বিদ্যাপতি রানী লছিমা দেবীর গুণমুগ্ধ ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ বিদ্যাপতির ভাষাকে বিকৃত মৈথিল বলেছেন।
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বিদ্যাপতি কে পঞ্চোপাসক হিন্দু বলেছেন।
'মহাজন পদাবলী' পদসংকলনটি বিদ্যাপতির, জগবন্ধু ভদ্র,১৮৭৪ খ্রি:প্রকাশ করেন।
কীর্তিলতা কাব্যে বিদ্যাপতি নিজেকে খেলন কবি বলেছেন।
বিদ্যাপতি সংস্কৃত ভাষায় দুটি নাটক রচনা করেন গোরক্ষবিজয় ও মনি মঞ্জুরী।
বিদ্যাপতির আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হল বিভাগসার।
বিদ্যাপতির পদ প্রথম আবিষ্কার করেন জর্জ গিয়ারসন
বিদ্যাপতি কে পাশ্চাত্য কবি চসার সঙ্গে তুলনা করা হয়।
বিদ্যাপতি কীর্তি সিংহের আমলে রাজ পন্ডিত হিসেবে নিযুক্ত হন
বিদ্যাপতির হর পার্বতী বিষয়ক পদগুলি মহেশবাণী নামে প্রচলিত।
বিদ্যাপতি ভক্ত নহেন, কবি - গোবিন্দদাস যতবড় কবি, ততোধিক ভক্ত" -
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বিদ্যাপতির পদাবলী মধুচক্রের মত, ইহার কুহরে কুহরে মাধুর্য'' - আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন।
বিদ্যাপতির প্রথম অধ্যায়গুলি সমস্ত অলংকার শাস্ত্রেরঅনুযায়ী, কিন্তু মাথুর ও ভাবসম্মিলনে তিনি ভাবরাজ্যে বাঙালী বৈষ্ণব কবিদের মূলসুর ধরিয়াছেন_—দীনেশচন্দ্র সেন
"বিদ্যাপতির কবিতা দূরগামিনী বেগবতী তরঙ্গসঙ্কুলা নদী" - বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তি ।
"বাঙ্গালী বিদ্যাপতির পাগড়ী খুলিয়া ধুতি চাদর পড়াইয়া দিয়াছে"-দীনেশচন্দ্র সেন।
শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর "বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা" গ্রন্থে বিদ্যাপতির পদকে" Cosmic imagination" বলেছেন।
'' বিদ্যাপতি যে মৈথিল লোকে তাহা একরুপ ভুলিয়াই গেল । বিদ্যাপতি অনেকের কাছে বাঙালি হইয়া দাঁড়াইলেন।'' - খগেন্দ্র নাথ মিত্র।
বিদ্যাপতির জীবন নিয়ে তৈরি
সিনেমার নাম 'বিদ্যাপতি', ১৯৩৭ খ্রি. তৈরি হয়। পরিচালক - দেবকী বসু। পাহাড়ী সান্যাল বিদ্যাপতি চরিত্রে অভিনয় করেন।
তুর্কিরাজের বর্ণনা আছে কীর্তিলতাগ্রন্থে।
ব্যাড়ী ভক্তিতরঙ্গিনীগ্রন্থে বিদ্যাপতি মনসার কথা লিখেছেন।