HEADER ADDS

মুক্তক ছন্দ বা মুক্তবন্ধ ছন্দ ও গৈরিশ ছন্দের বৈশিষ্ট্য

গৈরিশ ছন্দ

       মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রচলিত ছন্দরীতিকে ভেঙে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তন করেন । যে চিরাচরিত মিল ও যতির ব্যবহার ভাবকে কৃত্রিমতার মধ্যে আবদ্ধ করে রেখেছিল ,সেখানে মুক্ত বাতাস চলাচল শুরু করল । ভাবের প্রবহমানতার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধনমুক্তির এক তীব্র উল্লাস পরিলক্ষিত হল। গিরিশ চন্দ্র ঘোষ অমিত্রাক্ষর ছন্দকে নাটকে ব্যবহার করার জন্য ভেঙে সহজ রূপদান করেন,যা গৈরিশ ছন্দ নামে পরিচিত । গিরিশ চন্দ্র ঘোষের নাম অনুসারে এই নাম হলেও এই ছন্দের প্রবর্তক গিরিশ চন্দ্র নন, রাজকৃষ্ণ রায়ের নাটকে এই ছন্দের প্রথম প্রয়োগ দেখা যায় ।

বৈশিষ্ট্য

ক) গৈরিশ ছন্দের মাত্রা গণনারীতি অক্ষরবৃত্তের মতো ।

খ) প্রতি চরণে সাধারণত দুটি পর্ব থাকে ।

গ) চরণের শেষে নির্দিষ্ট বিরাম থাকে না।

ঘ) অসম দৈর্ঘের চরণ লক্ষ্য করা যায় ।

ঙ) চরণান্তিক মিল থাকে না ।

চ) রচনারীতি অনেকটা গদ্যের মতো ।

ছ) ভাবের বন্ধনমুক্তি এর অন্যতম প্রধান  বৈশিষ্ট্য ।





 আরও পড়ুন- সনেটের বৈশিষ্ট্য 

মুক্তক ছন্দ

   

       ভাবের প্রবহমানতাকে গুরুত্ব দিয়ে অক্ষরবৃত্ত রীতির অন্যতম একটি ছন্দ প্রকরণ হল মুক্তক ছন্দ । পয়ারের বন্ধন মোচন ঘটেছিল মধুসূদনের হাতে । ফলে ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল , প্রকাশের গতি হয়েছিল সাবলীল ।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বলাকা’ কাব্যগ্রন্থে এই রীতির ছন্দের প্রথম সার্থক প্রয়োগ করেন । অনেকে বিদেশী Free verse এর সঙ্গে মুক্তক ছন্দের তুলনা করেন । কিন্তু সেই মিল বাইরের মিল,ভিতরের মিল সেই ভাবে নেই । মুক্তক ছন্দ সম্পর্কে অধ্যপক প্রবোধ চন্দ্র সেন বলেছেন –

বলাকায় যে মুক্ত ছন্দের সন্ধান পাই তাতে কৃত্রিম বন্ধনের সম্পূর্ণ অবসান ঘটেছে। সুতরাং এ ছন্দের নাম দেওয়া যেতে পারে ‘মুক্তক’ ছন্দ । যে ছন্দকে আমরা verse libra বা free verse নামে জানি তাকেই মুক্তক নামে অভিহিত করলুম ।

        অমূল্যধন মুখোপাধ্যায় কিন্তু বলাকার ছন্দকে free verse বলতে রাজি নন । এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন –

বিদেশি free verse এবং আমাদের ‘মুক্তক’ ছন্দ বাইরের আকৃতিতে সদৃশ হলেও দুটি দেশের মৌলিক প্রকৃতি কখনো এক নয়।

বৈশিষ্ট্য

ক) মাত্রা গণনারীতি অক্ষরবৃত্তের মতো ।

খ) পর্ব সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়, ফলে চরণের পর্ব সংখ্যায় ভিন্নতা দেখা যায় ।

গ) চরণগুলি অসম দৈর্ঘের হয় ।

ঘ) খণ্ড পর্বের চরণ দেখা যায় ।

ঙ) যতি প্রয়োগের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই ।

চ) প্রতিটি পর্বে জোড় মাত্রা দেখা যায় ।

 

দৃষ্টান্ত

         তোমায় কি গিয়েছিনু ভুলে ?

তুমি যে নিয়েছ বাসা জীবনের মূলে,

                   তাই ভুল,

অন্য মনে চলি যবে পথে,ভুলিনে কি ফুল?

                   ভুলিনে কি তারা ?

                    তবুও তাহারা

প্রাণের নিশ্বাসবায়ু করে সুমধুর,

ভুলের শূণ্যতা মাঝে ভরি দেয় সুর।

           ভুলে থাকা নয় সে তো ভোলা

বিস্মৃতির মর্মে বসি রক্তে মোর দিয়েছ যে দোলা । (  বলাকা , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর )