বিশেষ্য কাকে বলে ? বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগগুলি আলোচনা কর –
মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অথবা উপলব্ধিগোচর যে কোন বস্তু ,ভাব,গুণ,সত্তা বা ক্রিয়াবাচক শব্দকেই বিশেষ্য বা নামশব্দ-রূপে অভিহিত করা চলে । আমরা বাক্যে যে সমস্ত শব্দ ব্যবহার করি তাদের একটা বৃহত অংশই বিশেষ্যপদবাচ্য। লিঙ্গ,বচন, এবং ক্রিয়ার সঙ্গে সম্বন্ধভেদে বিশেষ্যের রূপান্তর ঘটে থাকে । যে কোন বিশেষ্য শব্দই প্রথম পুরুষ বাচক । - অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র ভট্টাচার্য
বিশেষ্য কাকে বলে ?
রবীন্দ্রনাথ (ব্যক্তিনাম) ,লোহা (বস্তুর নাম)
, মহাভারত (গ্রন্থের নাম), কোলকাতা ( স্থান নাম ) ,বৌদ্ধ ( সম্প্রদায়ের নাম ) , মমতা ( গুণের নাম ) এই গুলি সবই বিশেষ্য । বিশেষ
করে কিছু বলে বলেই এগুলি বিশেষ্য ।
যে পদ দ্বারা কোন কিছুর নাম বোঝায় , তাকে
বিশেষ্য বলে ।
বিশেষ্যের
শ্রেণিবিভাগ -
১ . নামবাচক বা সংজ্ঞা বাচক বিশেষ্য-
যে বিশেষ্যপদ
নির্দিষ্টভাবে কোনো ব্যক্তি,স্থান,দেশ,নদনদী,গ্রন্থ,প্রতিষ্ঠান ,পর্বত,পত্র-পত্রিকার
নাম প্রকাশ করে ,তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে । নাম প্রকাশ করে বলে এদের নামবাচক বিশেষ্যও
বলে ।
যেমন-
·
ব্যক্তিনাম-
রবীন্দ্রনাথ,বিবেকানন্দ,রামমোহন,নজরুল,আব্দুল কালাম,বায়রন ইত্যাদি ।
·
স্থাননাম-
কোলকাতা, দিল্লী, ঢাকা,খুলনা, বরিশাল, পুরুলিয়া,শিলিগুড়ি,ঝাড়্গ্রাম ইত্যাদি ।
·
দেশের
নাম – ভারতবর্ষ , বাংলাদেশ,জাপান, আমেরিকা,ইংল্যাণ্ড, রাশিয়া,নেপাল,ভুটান ইত্যাদি ।
·
নদ-নদীর
নাম – গঙ্গা , পদ্মা , কংসাবতী , শিলাবতী, দামোদর , অজয়, নীলনদ , ইত্যাদি ।
·
পাহাড়-পর্বতের
নাম – হিমালয়,আল্পস,অযোধ্যা,শুশুনিয়া, বিহারীনাথ, বিন্ধ্য, আরাবল্লী ইত্যাদি ।
·
গ্রন্থ
নাম – গীতা , গীতাঞ্জলী , মহাভারত , রামায়ন , কোরান,বাইবেল , বেদ ইত্যাদি ।
·
প্রতিষ্ঠান-
কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বিশ্বভারতী , বসু বিজ্ঞান মন্দির ইত্যাদি
।
·
পত্র-পত্রিকার
নাম – দেশ পত্রিকা, আনন্দবাজার ,প্রথম আলো, অমৃতবাজার , শুকতারা ইত্যাদি ।
·
সমুদ্রের
নাম – প্রশান্ত মহাসাগর,ভারত মহাসাগর,বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর , আটলান্টিক ইত্যাদি ।
২. জাতি বাচক বা শ্রেণিবাচক বিশেষ্য-
যে বিশেষ্যপদ কোনো জাতি , শ্রেণি বা একই বৈশিষ্ট্য
(ধর্ম) সম্পন্ন ব্যক্তি,প্রাণী বা অপ্রাণীকে বোঝায় তাকে জাতিবাচক বা শ্রেণিবাচক বিশেষ্য
বলে ।
জাতিবাচক বিশেষ্য কোনো কিছুকে নির্দিষ্ট
করে না । জাতিবাচক বিশেষ্য নির্দিষ্টভাবে প্রযুক্ত
হলে সংজ্ঞা বাচক বিশেষ্যে পরিণত হয় । যখন আমরা বলি – ‘পাখি গান করে ।’ , তখন কোন পাখি
গান করে তা নির্দিষ্ট নয় । টিয়া,ময়না,ফিঙ্গে,শ্যামা ,কাকাতুয়া যে কোনো পাখি হতে পারে
। তাহলে ‘পাখি’ জাতিবাচক বিশেষ্য । কিন্তু যখন বলি – “ শ্যামার নরম গান শুনেছিল ।”
, তখন আমরা অন্য কোনো পাখিকে না বুঝে শুধু ‘শ্যামা’-কেই বুঝি । এখানে ‘শ্যামা’ সংজ্ঞা
বাচক বিশেষ্য ।
যেমন- মানুষ , পাখি , গরু , বাঘ, কীট , গাছ, হিন্দু,মুসলমান
, খ্রিস্টান , বৌদ্ধ , মাছ ইত্যাদি ।
ক)
মানুষ মরণশীল ।
খ)
“কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি ।”
গ)
“ হিন্দু না মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন ?”
ঘ)
বনে থাকে বাঘ ।
ঙ)
একটি গাছ একটি প্রাণ ।
৩ . বস্তুবাচক বিশেষ্য-
যে
বিশেষ্য অ-প্রাণীবাচক জিনিস বা পদার্থের নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে ।
যেমন-
লোহা,চিনি,কাগজ,জল,তেল, আকাশ,টাকা, কয়লা ইত্যাদি ।
·
“কালি
কলম মন লেখে তিন জন ।”
৪ . সমষ্টিবাচক বিশেষ্য-
যে বিশেষ্যপদ বস্তু ,প্রাণী, বা ব্যক্তির সমষ্টি
বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে । সমষ্টিবাচক বিশেষ্য সাধারণত সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের
সমষ্টি বোঝায় । সাধারণত একবচন থেকে বহুবচন করার সময় সমষ্টিবাচক বিশেষ্যগুলি ব্যবহার
করে বহুবচন করা হয় ।
যেমন-
দল,সভা,সমিতি,শ্রেণি,পাল,সংঘ,সমাজ,জনতা,গুচ্ছ,স্তবক,বাহিনী, ঝাঁক ,মালা, গোষ্ঠী ইত্যাদি ।
·
“পদ্মকোশের
বজ্রমণি ওই আমাদের ছেলের দল ।
·
“আমরা
বেঁধেছি কাশেরগুচ্ছ ,গেঁথেছি শেফালিমালা ।”
·
বুরুণ্ডির
মাঠে আজ সভা আছে ।
·
সমস্ত
কাজ পরিচালনা করছে লক্ষ্মীবাঈ মহিলা সমিতি ।
·
“রাখাল
গরুর পাল যায় মাঠে ।”
·
ছাত্র-সংঘের
অনুষ্ঠান চলছে ।
·
ছাত্র-সমাজ
আগামীর পথনির্দেশক ।
·
‘রোডেডেনড্রণ
গুচ্ছ’
·
“এক
ঝাঁক বলাকা পথ হারালো ।”
৫ . সংখ্যা বাচক বিশেষ্য-
বিভিন্ন
সংখ্যাবাচক শব্দগুলি যখন বিশেষ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষ্য বলে
।
এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ
,ছয়,সাত ইত্যাদি সংখ্যাবাচক শব্দ যখন শুধু সংখ্যামাত্রের বোধক হয় ,তখন তা বিশেষ্য ।
যেমন- একে একে দুই হয় । আবার যখন কোনো
পদের সংখ্যাবোধক হয় , তখন বিশেষণ । যেমন- গাছের ডালে পাঁচটি পাখি বসে আছে ।
·
আমি
সাতে-পাঁচে থাকি না ।
·
“
দশে মিলি করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ
।”
৬. গুণবাচক বিশেষ্য-
যে
বিশেষ্যপদ কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর দোষ,গুন,প্রকৃতি,ধর্ম,ভাব
ইত্যাই প্রকাশ করে তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে ।
যেমন
– স্নেহ,মমতা,নিষ্ঠা,সরলতা,শ্রদ্ধা, পাপ,প্রতিভা,সাহস, ভক্তি,ইত্যাদি ।
·
মাতৃস্নেহ
পরম রত্ন ।
·
কর্মে
নিষ্ঠা থাকলে সাফল্য অবশ্যম্ভাবী ।
·
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর সাহিত্য জগতে বিরল প্রতিভা ।
৭ . অবস্থাবাচক বিশেষ্য-
যে
বিশেষ্যপদে কোনো ব্যাক্তি বা বস্তুর অবস্থা প্রকাশ পায় ,তাকে অবস্থাবাচক বিশেষ্য বলে
।
যেমন-
শৈশব,বার্ধক্য, যৌবন,সুখ,দুঃখ,স্বাধীনতা,যন্ত্রণা, শান্তি ইত্যাদি ।
·
“সুখে
আছে সর্ব চরাচর।”
·
স্বাস্থে-সম্পদে আমরা ভালোই আছি ।
·
শান্তিতে বাস করো ।
৮.
ভাববাচক বিশেষ্য-
যে বিশেষ্যপদে প্রাণীর মনের বিশেষ ভাব প্রকাশিত হয়
তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে ।
যেমন
– সুখ , তৃপ্তি,আনন্দ , বেদনা,উল্লাস , ক্রোধ,নৈরাশ্য ইত্যাদি ।
·
জীবনে
সুখ নাই ।
·
আনন্দ ,বেদনা জীবনেরই অঙ্গ ।
ভাব্বাচক
বিশেষ্য প্রয়োগের কারণে কখনো কখনো অবস্থাবাচক বিশেষ্য ও হতে পারে ।
জীবনে
সুখ নাই । ( ভাববাচক বিশেষ্য )
সে
সুখেই আছে । ( অবস্থাবাচক )
৯ . ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য-
যে বিশেষ্যপদে কোনো কাজের নাম বোঝায় বা ক্রিয়ার ভাব নির্দেশ করে ,তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে ।
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য ও ক্রিয়াপদ এক জিনিস নয় । ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য শুধুমাত্র কাজটির
নামকে বোঝায় , কিন্তু ক্রিয়াপদ ইকছু করা, হওয়া,থাকা ইত্যাদিকে বোঝায় ।
যেমন-
চলন,গমন,শয়ন,পঠন,আসা,যাওয়া,দর্শন,খাওয়া,শোনা
ইত্যাদি ।
·
গল্পটা
অন্তত পাঁচ জনের মুখে শোনা হয়েছে ।
·
অনেকেরই
খাওয়া হয় নি ।
·
“আমার
নাই বা হলো পারে যাওয়া ।”
·
“লিখন তোমার ধুলায় হয়েছে ধূলি ।”
বিশেষ্যের রূপগত শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে জানতে
এখানে ক্লিক করুন ।