ধাতু ও ক্রিয়াপদের প্রশ্নোত্তর
ধাতু বলতে কী বোঝায় ? উদাহরণ দাও ।
পতঞ্জলির ‘মহাভাষ্যে’
ধাতু সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘ক্রিয়াবচনো ধাতুঃ’ । ধাতুই ক্রিয়ারমূল এবং ক্রিয়ারবাচক
। ‘ধাতু’ শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ ‘ধারক’ অর্থাৎ ক্রিয়ার্থের ধারক ।ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ
করলে যে অবিভাজ্য মৌলিক অংশে পাওয়া যায় ,যার মধ্যে ক্রিয়াপদের অন্তর্নিহিত ভাব দ্যোতিত
হয় তাকে ধাতু বলে। যেমন কর্ , চল্ , পড়্
, দেখ্ , শুন্ ইত্যাদি।
ক্রিয়া পদ কাকে বলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
সংস্কৃতে বলা
হয়েছে ‘ক্রিয়াবাচকমাখ্যাতম্’ - অর্থাৎ কর্তার কিছু করা যার দ্বারা আখ্যাত হয় তাই
ক্রিয়া । যে পদ দ্বারা কোন কিছু করা, থাক্ হওয়া বা কর্তার বিশেষ অবস্থাকে বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে। ধাতু প্রকৃতির সঙ্গে
প্রত্যয় , বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে ।যেমন - পড়ে , খেলে , চলে , শুনে ইত্যাদি । এই উদাহরণ গুলি দিয়ে কোন না কোন কাজ করার
ভাব ,অর্থ প্রকাশিত হয় তাই এগুলি ক্রিয়াপদ।
গঠনগত দিক থেকে ধাতু কত
প্রকার ও কি কি ?
গঠনের দিক
থেকে বাংলা ভাষাকে প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়- (১) মৌলিক
ধাতু (২) সাধিত ধাতু (৩) সংযোগমূলক ধাতু ।গঠনগত শ্রেণীবিভাগ উৎপত্তি ও প্রকৃতির গত
শ্রেণীবিভাগ ও বলা হয়ে থাকে। একটি মাত্র দল নিয়ে গঠিত হয় বলে মৌলিক ধাতু কে একদলীয়
ধাতু ,একাধিক দল নিয়ে গঠিত হয় বলে সাধিত ধাতু কে বহুদলীয় ধাতু্ এবং একাধিক পদ নিয়ে
গঠিত হয় বলে সংযোগমূলক ধাতু কে বহুপদী ধাতু বলা হয় ।
মৌলিক ধাতু কাকে বলে উদাহরণ
দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
যে ধাতু স্বয়ংসিদ্ধ
যাদের ভাষায় বিশ্লেষণ হয়না বা বিশ্লেষণ করলেও বিশ্লিষ্ট অংশের কোন অর্থ থাকে না তাকে
মৌলিক ধাতু বলে । মৌলিক ধাতু অন্য ধাতুর সাহায্য ছাড়াই
অন্যপ্রকার ধাতু এবং বিভিন্ন শব্দ গঠন করতে পারে,তাই এদের সিদ্ধ ধাতুও বলে । যেমন- চল্ , দেখ্ , শুন্ ইত্যাদি । এই ধাতু গুলির সঙ্গে
ক্রিয়া বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়াপদ গঠন করা যায়- চল+এ = চলে
(ক্রিয়াপদ ) , দেখ্ +আ = দেখা ( ধাতু ) ।
মৌলিক ধাতু
কত প্রকার ও কি কি ?
মৌলিক ধাতু
বা সিদ্ধধাতু উৎসগত দিক থেকে বেশ কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। সংস্কৃত ধাতু ,তদ্ভব ধাতু্ ,অজ্ঞাতমূল খাঁটি বাংলা ধাতু
,ধ্বন্যাত্মক ধাতু ইত্যাদি ।
তৎসম ধাতু - চল্ , লিখ্
, পাল্ , দুল্ ইত্যাদি ।
তদ্ভব ধাতু - কৃ>কর্
, পঠ্>পড়্ , বুধ্>বুঝ্ ইত্যাদি ।
অজ্ঞাতমূল খাঁটি বাংলা
ধাতু - ভাস্ , খুঁজ্ , ফেল্ ইত্যাদি
ধ্বন্যাত্মক ধাতু- ধুঁক্
, ঠুক্ , ফুঁস্ ইত্যাদি ।
সাধিত ধাতু কাকে বলে
? উদাহরণ দাও ।
মৌলিক ধাতুর
শেষে এক বা একাধিক প্রত্যয় যোগ করে যে ধাতু গঠন করা হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে।সাধিত
ধাতু বিশ্লেষণ যোগ্য। সাধিত ধাতু কে বিশ্লেষণ করলে একটি সিদ্ধধাতু
বা নামপদ এবং এক বা একাধিক প্রত্যয় পাওয়া যায় । যেমন - পড়া (পড়াইতেছেন ) , হাতা (হাতাইয়াছে ) ধাতু গুলিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই যথাক্রমে
‘পড়্’ সিদ্ধধাতু , ‘হাত’ নামপদ ও ‘আ’ প্রত্যয় । তাই এগুলি সাধিত ধাতুর উদাহরণ ।
সাধিত ধাতু কত প্রকার
ও কি কি ?
ধাতুর অর্থ ও সাধন অনুসারে সাধিত ধাতুকে চার ভাগে ভাগ করা হয় - (১) প্রযোজক
ধাতু (২) নাম ধাতু (৩) ধনাত্মক ধাতু (৪) কর্মবাচ্যের
ধাতু । অবশ্য কেউ কেউ ধ্বন্যাত্মক ধাতুকে নামধাতুর অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন। আবার কোন
কোন ব্যাকরণবিদ কর্মবাচ্যের ধাতু কে বাদ দিয়ে ধনাত্মক ধাতুকে পৃথকভাবে দেখান ।
প্রযোজক ধাতু কাকে বলে
উদাহরণ দাও।
যে ধাতুতে
অন্য ব্যক্তিকে কোন কাজে প্রযুক্ত বা নিয়োজিত করা বোঝায় তাকে প্রযোজক ধাতু বলে ।
নিজে না করে অন্য কে দিয়ে করানো অর্থে এই ধাতু ব্যবহৃত হয় বলে একে প্রেরণার্থক ধাতুও বলে । মৌলিক ধাতু
বা সিদ্ধ ধাতুর পরে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে প্রযোজক ধাতু গঠিত হয়
।
যেমন- মা শিশুকে চাঁদ
দেখাইতেছেন (দেখা+ইতেছেন ) । এখানে মৌলিক ধাতু ‘দেখ্’ , ‘আ’ প্রত্যয়যোগে ‘দেখা’ প্রযোজক ধাতু তে পরিণত হয়েছে ।
প্রযোজক ধাতুকে বাংলায় ণিজন্ত ধাতু বলা যায় না কেন?
উ;- সংস্কৃতে মৌলিক
ধাতুর শেষে 'নিচ্' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ণিজন্ত ধাতু গঠিত হয়। যেমন- শিক্ষ + নিচ্= শিক্ষি। 'নিচ্' একটি ধাত্ববয়ব প্রত্যয় কিন্তু বাংলায় মৌলিক ধাতুর শেষে 'নিচ্' প্রত্যয় ব্যবহৃত হয় না, 'আ' প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। তাই যেহেতু বাংলা প্রযোজক
ধাতু ণিজন্ত নয়, তাই একে ণিজন্ত ধাতু বলা যায়না।
নামধাতু কাকে বলে ? উদাহরণ
দাও ।
নাম পদ সাধিত ধাতু হিসেবে
ব্যবহৃত হলে তাকে নাম ধাতু বলে। বিশেষ্য ও বিশেষণের পর ‘আ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নামপদ
গঠন করে ।
যেমন- হাত (বিশেষ্য)
+ আ = হাতা ( সে আমার কলমটি হাতিয়েছে ।)
ঘন (বিশেষণ)
+ আ = ঘনা ( আকাশে মেঘ ঘনিয়েছে ।)
মাইকেল মধুসূদন
দত্ত তাঁর রচনায় নামধাতুর ব্যাপক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। তবে নামধাতুর গঠনে তিনি কিছু
পরিবর্তন এনেছেন, নাম পদের শেষ বর্ণ লোপ
পেয়েছে এবং ‘আ’ প্রত্যয় যুক্ত হয়নি ।
যেমন - ‘উত্তরিলা বিভীষণ বৃথা এ সাধনা ধীমান !’ উত্তরিলা = উত্তর
+ইলা ।
ধন্যাত্মক ধাতু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
ধ্বন্যাত্মক
ধাতুর শেষে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে যে ধাতু গঠন করা হয় তাকে ধ্বন্যাত্মক ধাতু বলে ।
যেমন- ঘরেতে ভ্রমর এলো
গুনগুনিয়ে । ( গুনগুন + আ= গুনগুনা )
কখনো কখনো অনুকার শব্দের
শেষে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে ধনাত্মক ধাতু গঠন করা হয়। যেমন- সে হাঁপায় । (হাঁপ +আ = হাঁপা )
যুক্তধাতু কাকে বলে ?
উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
বিশেষ্য,বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক
অব্যয়ের পরে কর্,দে,হ্,পা,বস্,মার্,খা,যা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু ব্যবহৃত হয়ে যে ধাতু
গঠিত হয় ,তাকে যুক্ত ধাতু বলে । এই ধাতুতে উভয় অংশের অর্থ প্রাধান্য পায় ।
যেমন- উত্তর দে , আবির্ভূত
হ ইত্যাদি । এখানে ‘উত্তর’,’আবির্ভূত’ পদ্গুলি ‘দে’ ,’হ’ ধাতুগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে
একটি ধাতু গঠন করেছে ।
যৌগিক ধাতু কাকে বলে
? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
‘ইয়া’ ‘ইতে’ বিভক্তিযুক্ত
অসমাপিকা ক্রিয়া সমাপিকা ক্রিয়ার ধাতুযোগে যে ধাতু গঠন করে ,তাকে যৌগিক ধাতু বলে ।
যৌগিক ধাতুতে দুটি ধাতু থাকলেও একটি মাত্র ধাতুর অর্থ প্রাধান্য পায় । অসমাপিকা ক্রিয়ার
ধাতুর অর্থই প্রকাশিত হয় ।
যেমন- ‘খাইয়া ফেল্’ এই উদাহরণটিতে খাওয়ার অর্থই প্রকাশ পেয়েছে,ফেলার
অর্থ নয় । তেমনি আবার ‘উছলে উঠ্’ , ‘বসে পড়্’ ইত্যাদি ।
যুক্তক্রিয়া ও যৌগিক ক্রিয়ার
পার্থক্য লিখ ।
যুক্তক্রিয়া ও যৌগিক ক্রিয়া দুটোই বহুপদীক্রিয়া
কিন্তু যুক্ত ক্রিয়া ও যৌগিক ক্রিয়ার প্রকৃতিগত কিছু পার্থক্য আছে । যুক্তক্রিয়ার পুর্বে
থাকে বিশেষ্য,বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়
পরে থাকে কর্,দে,হ্,পা,বস্,মার্,খা,যা ইত্যাদি মৌলিক ধাতু । যৌগিক ক্রিয়ার
পূর্বে থাকে ইয়া’ ‘ইতে’ বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া পরে থাকে একটি সমাপিকা ক্রিয়া
। যুক্তক্রিয়ায় উভয় অংশের অর্থ প্রাধান্য পায় ।
যেমন- উত্তর দাও , আবির্ভূত
হইলেন ইত্যাদি । এখানে ‘উত্তর’,’আবির্ভূত’ পদ্গুলি ‘দাও’ ,’হইলেন’ ক্রিয়াগুলির সঙ্গে
যুক্ত হয়ে একটি ক্রিয়া গঠন করেছে । যৌগিক ক্রিয়ায়
দুটি ক্রিয়া থাকলেও অসমাপিকা ক্রিয়ার অর্থই প্রাধান্য পায় । সমাপিকা ক্রিয়া অসমাপিকা
ক্রিয়ার অর্থকে বিশিষ্টতা দান করে । যেমন- ‘খাইয়া ফেল্’ এই উদাহরণটিতে খাওয়ার অর্থই প্রকাশ পেয়েছে,ফেলার
অর্থ নয় ।
কোন ধাতুকে কেন অসম্পূর্ণধাতু বলে বুঝিয়ে দাও ।
আছ্ , বট্ ,নহ্ , গ্
ইত্যাদি ধাতুগুলির বাংলা ভাষায় ব্যবহার হলেও
স্বতন্ত্রভাবে ক্রিয়ায় পরিণত হতে পারে না । এই ধাতুযোগে সমস্ত কালের ,সমস্ত
ভাবের ক্রিয়ারূপ পাওয়া যায় না , তাই এদের অসম্পূর্ণ ধাতু বলে । যেমন – ‘আছ্’ ধাতুর
বর্তমান ও অতীত কালের রূপ থাকলেও ভবিষ্যৎ কালের রূপ পাওয়া যায় না , ‘থাক’ ধাতুর ব্যবহার
করে ভবিষ্যৎ কালের কাজ চালাতে হয় , তাই ‘আছ্’ একটি অসম্পূর্ণ ধাতু ।
সমাপিকা ক্রিয়া কাকে বলে
উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
যে ক্রিয়াপদ উদ্দেশ্য
সম্বন্ধে যা বলার থাকে তা সম্পূর্ণভাবে বলে , বাক্যের গঠনকে সম্পূর্ণ করে,বাক্যের অর্থকে
পূর্ণতা দেয় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে । বক্তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য অন্য কোনো ক্রিয়ার
উপর নির্ভর করতে হয় না । যেমন – সে স্কুলে যায় । এখানে ‘যায়’ ক্রিয়াটি বাক্যটির অর্থ
ও ভাবকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছে,তাই এটি একটি সমাপিকা ক্রিয়া ।
অসমাপিকা ক্রিয়া কাকে
বলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
যে ক্রিয়াপদ উদ্দেশের
বিধেয় হয়েও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলার থাকে
তা সম্পূর্ণভাবে বলে না , বাক্যের গঠনকে সম্পূর্ণ করে না ,বাক্যের অর্থকে পূর্ণতা দেয়
না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে । বক্তার মনের ভাব প্রকাশের জন্য অন্য কোনো ক্রিয়ার উপর
নির্ভর করতে হয় । যেমন – সে ভাত খেয়ে স্কুলে
যায় । এখানে ‘খেয়ে’ ক্রিয়াটি বাক্যটির অর্থ ও ভাবকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছে না
, ‘যায়’ ক্রিয়া দিয়ে বক্তার মনেরভাব সম্পূর্ণ করতে হচ্ছে তাই ‘খেয়ে’ একটি সমাপিকা ক্রিয়া
।
ভূতার্থ অসমাপিকা ক্রিয়া কি?
উ;- ধাতুর সঙ্গে 'ইলে' প্রত্যয় যোগ করে এই
অসমাপিকা ক্রিয়া পাওয়া যায়। সংস্কৃতের 'ভাবে সপ্তমী'র ভাব প্রকাশ করে বলে এর নাম ভূতার্থ অসমাপিকা ক্রিয়া।একে সাপেক্ষ- সংযোজক বা সংযোজক অসমাপিকা ও বলে। যেমন-" মেঘ কাটিলে তারা ফুটিবে"।
ল্যবর্থ অসমাপিকা ক্রিয়া কি?
ধাতুর সঙ্গে 'ইয়া' প্রত্যয় যোগে যে
অসমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয় তাকে ল্যবর্থ অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থ কিংবা প্রয়োগের বিচারে এই ধরনের ক্রিয়া বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াটির আগেই ঘটে গেছে এমন কোনো
কাজ বা ঘটনার প্রতি নির্দেশ করে । এইজন্য এর অন্য নাম পূর্বক্রিয়া। সংস্কৃত 'ল্যপ' প্রত্যয়ান্ত শব্দও অনুরূপ অর্থ
প্রকাশ করে, এর থেকেই লব্যর্থ নামটি এসেছে। যেমন- "তাহার গান শুনিয়া আমার ভালো লাগল"।
তুমর্থ অসমাপিকা ক্রিয়া কি
ধাতুর সঙ্গে 'ইতে' ,'তে' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে অসমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে তুমর্থ অসমাপিকা
ক্রিয়া বলে। অর্থ বা প্রয়োগের বিচারে এই ক্রিয়া বাক্যস্থিত কোন পদের হেতু বা নিমিত্ত নির্দেশ করে। এই কারণে এই ক্রিয়ার অন্য
নাম নিমিত্তার্থক অসমাপিকা ক্রিয়া। সংস্কৃতে 'শতৃ' ,'তুমন' প্রভৃতি প্রত্যয়ের এইরকম অর্থ হয় বলে এই নামটি এসেছে। যেমন- "কাঠ কাটতে
জঙ্গলে গেছে"।
সকর্মক ক্রিয়া কাকে বলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
ক্রিয়ার বিষয়কে কর্ম বলে । ক্রিয়াপদ দ্বারা বর্ণিত ব্যাপার অন্য পদকে অর্থাৎ কর্মপদকে
অবলম্বন করে সম্পূর্ণ হলে তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে । ‘আমি বই পড়ি ।’ এই উদাহরণটিতে ক্রিয়া
বর্ণিত ব্যাপারটি কর্তা ‘আমি’কে অবলম্বন করে
সম্পূর্ণ হয়নি , ‘বই’কে আশ্রয় করে সার্থক হয়েছে । তাই এই ক্রিয়াকে সকর্মক ক্রিয়া বলে
। সাধারণত ক্রিয়াকে ‘কি’ বা ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করে কর্মকে পাওয়া যায় ।
অকর্মক ক্রিয়া কাকে বলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
যে ক্রিয়া কর্তৃনিষ্ঠ,অর্থাৎ ক্রিয়া বর্ণিত ব্যাপারটি কর্তাকে অবলম্বন করিয়াই সম্পূর্ণ
হয় ,অন্য কোনো বস্তু বা পদার্থের অপেক্ষা রাখে না ,তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে । সাধারণভাবে
আমরা বলতে পারি যে ক্রিয়ার কর্ম নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে ।
যেমন- ‘সে আসছে।’ , ‘সে হাসে। ’ ইত্যাদি । এই উদাহরণ দুটিতে ‘আসছে’ ও ‘হাসে’ এই
ক্রিয়া দুটির কোনো কর্ম নেই ,তাই এরা অকর্মক ক্রিয়া ।
সকর্মক ক্রিয়া কখন অকর্মক ও অকর্মক ক্রিয়া সকর্মক হিসাবে ব্যবহৃত হয় ?
ক্রিয়ার কর্ম থাকলে তাকে তবেই
তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে ,কিন্তু সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম যদি উহ্য থাকে তাহলে অকর্মক হিসাবে
ব্যবহৃত হতে পারে । যেমন – ‘আমি খাই ।’ এখানে ‘খাই’ ক্রিয়াটি সকর্মক ,কারণ তার কর্ম
ধারণের ক্ষমতা আছে । কিন্তু কি , বা কাকে দিয়ে প্রশ্ন করে আমরা কোনো উত্তর পাচ্ছি না
। তাই ‘খাই’ সকর্মক ক্রিয়াটি অকর্মক হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে ।
যে ক্রিয়ার কর্ম নেই তাকে অকর্মক ক্রিয়া বলে । কিন্তু অকর্মক ক্রিয়া
সকর্মক হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে যদি ক্রিয়াটি যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ,সেই ধাতু থেকে
নিষ্পন্ন কোনো পদ যদি কর্ম হিসাবে ব্যবহৃত হয় । যেমন – ‘হালকা হাসি হাসছে কেবল ।’এখানে
‘হাসি’ ও ‘হাসছে’ একই ধাতুজাত ।
ক্রিয়ার ভাব কাকে বলে? ক্রিয়ার ভাব কত প্রকার ?কোন ভাবকে অনুজ্ঞা ভাব বলে?
ক্রিয়ার যে প্রকাশভঙ্গির
দ্বারা ক্রিয়া সংঘটিত হবার উপায় প্রকাশ পায়, তাকে ক্রিয়ার ভাব বলে।
ক্রিয়ার ভাব কে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়- ১.নির্দেশক ভাব ২.অনুজ্ঞা ভাব ৩.সংযোজক ভাব। কোনো কোনো ব্যাকরণবিদ সংযোজক
ভাবকে বাদ দিতে চান আবার কোনো কোনো ব্যাকরণবিদ ইচ্ছাসূচক ভাব নিয়ে ক্রিয়ার ভাব মোট চার প্রকার আছে বলে মনে করেন।
আদেশ,নির্দেশ, অনুরোধ, উপদেশ ইত্যাদি মনের ভাবকে অনুজ্ঞা বলা হয়। ক্রিয়ার যে
ভাবের দ্বারা বক্তা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে আদেশ,
উপদেশ, অনুরোধ ইত্যাদি মনের ভাব প্রকাশ করে তাই অনুজ্ঞা।
আধুনিক ব্যাকরণে সংযোজক ভাবকে বাদ
দেওয়ার কারণ কি?
অনেক ব্যাকরণবিদ ও ভাষাতাত্ত্বিক ক্রিয়ার ভাব
বলতে নির্দেশক ও অনুজ্ঞা ভাবকে বুঝিয়েছেন। তারা সংযোজক ভাব কে বাদ দিতে চেয়েছেন ,কারণ সংযোজক ভাবের নিজস্ব কোনো ক্রিয়াবিভক্তি
নেই। নির্দেশক ভাবের ক্রিয়া বিভক্তি সংযোজক ভাবে ব্যবহৃত হয়। সংযোজক ভাব আসলে একাধিক
নির্দেশক ভাবের মিশ্র ফল। যেমন-
"আমি কলকাতা যাবো"(নির্দেশক
ভাব)
"যদি সে আসে তাহলে আমি কলকাতা
যাবো"(সংযোজক ভাব)
উপরের উদাহরণ দুটিতে প্রকাশভঙ্গিগত
এবং বিভক্তিগত কোনো পার্থক্য
নেই।
ক্রিয়ার প্রকার কাকে বলে? ক্রিয়ার
প্রকার কত প্রকার? নিত্যবৃত্ত প্রকার বলতে কি বুঝায়?
উ;- কর্তা সাপেক্ষে
সমাপিকা ক্রিয়ার অবস্থাকে ক্রিয়ার প্রকার বলা হয়। যে উপায়ে ক্রিয়াপদে বর্ণিত
কাজ ঘটবার প্রকার বা রীতির বোধ জন্মায়, তাই হল প্রকার।
ক্রিয়ার প্রকার চার ধরনের-১.সাধারণ ২.ঘটমান ৩.পুরাঘটিত ৪.নিত্যবৃত্ত।
নিত্যবৃত্ত কথার অর্থ হল
নিয়মিতভাবে অভ্যস্ত। ক্রিয়ার এই প্রকারের সাহায্যে ক্রিয়ার বর্ণিত কাজটি
নিয়মিতভাবে ঘটার ধরনকে বোঝায়। অর্থাৎ অভ্যাসের কথা জানা যায়। যেমন- "প্রতিদিন মায়ের মুখে মহাভারত শুনিত"।
মৌলিক কাল কাকে বলে ?
কোন কোন কাল মৌলিক কাল ?
মূলধাতুকে আশ্রয় করে যে কালরূপ গঠিত হয় তাকে মৌলিক
কাল বলে । মৌলিক ধাতুর সঙ্গে কালবাচক প্রত্যয় ও পুরুষবাচক বিভক্তি যুক্ত হয়ে মৌলিক
কাল গঠিত হয় ।
যেমন – সে ভাত খাইল ।
‘খাইল’ ক্রিয়াপদটি ‘খা’ মূল ধাতু ও ‘ইল’ পুরুষবাচক বিভক্তি যোগে গঠিত হয়েছে ।
প্রধানত মৌলিক কালরূপ মোট চারটি – সাধারণ বর্তমান,সাধারণ
অতীত, নিত্যবৃত্ত অতীত, সাধারণ ভবিষ্যৎ । অবশ্য কেউ কেউ বর্তমান অনুজ্ঞা ও ভবিষ্যৎ
অনুজ্ঞাকেও মৌলিক কালের অন্তর্ভুক্ত করতে চান । কারণ এই দুটিকালের ক্রিয়ারূপে মৌলিক
কালের সঙ্গে কালবাচক প্রত্যয় ও পুরুষবাচক বিভক্তি যুক্ত হয় ।
যৌগিক কাল কাকে বলে ?
কোন কালগুলি যৌগিক কাল ?
যে কালের ক্রিয়ারূপ একাধিক মৌলিক ধাতু ,প্রত্যয়
ও বিভক্তি যোগে গঠিত তাকে যৌগিক কাল বলে ।
যৌগিক ক্রিয়া গঠিত হয়
‘ইয়া’ বা ‘ইতে’ বিভক্তিযুক্ত মূলধাতুর পরে
‘আছ’ বা ‘থাক’ ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় বা বিভক্তি যুক্ত হয়ে ।
যেমন- ‘বাংলার মুখ আমি
দেখিয়াছি ’। ‘দেখিয়াছি’ ক্রিয়াটিকে বিশ্লেষণ করলে পাই – দেখ্+ইয়া+আছ্+ই । এখানে ‘দেখ’
ও ‘আছ’ দুটি মৌলিক ধাতু নিয়ে ক্রিয়ারূপটি গঠিত হয়েছে ।
যৌগিক কালের ক্রিয়ারূপ
ছয়টি – ঘটমান বর্তমান,পুরাঘটিত বর্তমান,ঘটমান অতীত,পুরাঘটিত অতীত,ঘটমান ভবিষ্যত,পুরাঘটিত
ভবিষ্যৎ ।
কোন কালকে সন্দিগ্ধ অতীত
বলে ? কেন বলে ?
পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কালকে
সন্দিগ্ধ অতীত বলা হয় ।
পুরাঘটিত অতীত কালে ক্রিয়ার
কাজটি ঘটার ব্যাপারে সন্দেহ,অনিশ্চয়তা,ও সম্ভাব্যতার ভাব প্রকাশ পায় ,তাই এই কালকে
সন্দিগ্ধ অতীত বলে । এই ক্রিয়া অর্থে অতীত কিন্তু এর ক্রিয়ারূপ ভবিষ্যতের ।
যেমন – কলমটি সে হারাইয়া
থাকিবে । ‘থাক’ ধাতুর সঙ্গে ‘ইব’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে সন্দেহের ভাবটি প্রকাশ করেছে।