অমিত্রাক্ষর ছন্দ কাকে বলে ?বাংলায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রথম ব্যবহার কে কোথায় করেন ?অমিত্রাক্ষর ছন্দের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর ।
অমিত্রাক্ষর
ছন্দের আক্ষরিক অর্থ চরণান্তে ধ্বনির মিলহীনতা । মধুসূদন দত্তের রচনায় সর্বপ্রথম ভাব
চরণ চরণান্তে প্রবাহিত হয়ে ছেদ যতির স্বাধীন ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে
অর্থাৎ ভাবকে তিনি পয়ারের গণ্ডি কেটে ভাবকে চরণ থেকে চরণান্তে প্রবাহিত করেন । মিল্টনের
ব্ল্যাঙ্ক ভার্স ছন্দের অবলম্বনে বাংলা ভাষায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর ‘পদ্মাবতী’
নাটকে এবং ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্যে সর্বপ্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার করেন। বাংলা
ছন্দের এই বিশেষ রূপটি প্রবহমান পয়ার নামে পরিচিত।
কৌটা খুলে
ক্ষত্রবধু যত্নে দিল ফোঁটা
সীমন্তে
সিন্দুর বিন্দু শোভিল ললাটে
গোধূলি
ললাটে আহা তারা রত্ন যথা
ফোঁটা দিয়া পদধূলি লইল সরমা।
অমিত্রাক্ষর ছন্দের বৈশিষ্ট্য
১) অমিত্রাক্ষর
ছন্দে ৮+৬, ১০+৮, ৮+১০ মাত্রার রূপ দেখা যায় ।
২) এই
ছন্দে ভাব চরণ থেকে চরণ আনতে প্রবাহিত হয় অর্থাৎ ভাবের প্রবহমানতা দেখা যায় যা পেয়ারে
নেই ।
৩) অক্ষরবৃত্ত
ছন্দের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এর সুর ও মাত্রা নির্ণয় রীতি অক্ষরবৃত্তের মত অর্থাৎ পদান্তে
হলন্ত, একাক্ষর এবং সমাসবদ্ধ শব্দ দ্বিমাত্রিক বাকি সকল ক্ষেত্রে রুদ্ধ দল ও মুক্ত
দল একমাত্রিক হয়।
৪) এই
ছন্দের ছেদ ও যতির স্বাধীন ব্যবহার দেখা যায়। প্রথম চরণে "খুলি" ও
"ফোঁটা"র পর হ্রস্বযতি এবং দ্বিতীয় চরণে "সীমন্তে"র পরে দীর্ঘ
যতি পড়েছে। যেমনটি দেখা যায় তৃতীয় চরণ ও চতুর্থ চরণের শেষে। আবার অনেক ক্ষেত্রে
দেখা যাচ্ছে ছেদ ও যতি একই স্থানে পড়েছে। অর্থাৎ এখানে হ্রস্বযতি এবং দীর্ঘ যতির যেমন
নির্দিষ্ট স্থান আছে তেমনি ছেদ অর্থাৎ বাক্যের সুনিয়ন্ত্রিত কালান্তর দেখা যায়।
৫) অমিত্রাক্ষর-এর
আক্ষরিক অর্থ চরণানন্তে মিল হলেও তা বাহ্যিক লক্ষণ। রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতায় দেখা
যায় চরণান্তে মিল থেকেও ভাবের প্রবহমানতার রূপ। এই প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার এর নাম
অমিত্রাক্ষর হলেও মাত্রা সুপরিচিত।
এখানে
চরণে মাত্রা সুনিশ্চিত হলেও ভাবের প্রবহমানতা থাকে । মধুসূদন দত্ত মিল্টনের ব্ল্যাঙ্ক
ভার্স অবলম্বনে বাংলা সাহিত্যে প্রথম এই ছন্দের ব্যবহার করে সাহিত্যক্ষেত্রে নবদিগন্তের
সূচনা করেছেন।