বাংলা ব্যাকরণের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১) অপিনিহিতি কথাটির
অর্থ কি? ব্যাকরণে কোন
প্রসঙ্গে কথাটি ব্যবহৃত হয়? অপিনিহিতি বিষয়টি
উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও।
উ:-অপিনিহিতি কথাটির 'অপি' মানে পূর্বে, 'নিহিতি' মানে স্থাপন। অর্থাৎ অপিনিহিতি কথার অর্থ হল
পূর্বে স্থাপন ।(ইংরেজি এই রীতির নাম Epenthesis
। Epen গ্রিক উপসর্গ
এর অর্থ পূর্ব, thesis স্থাপন)
ব্যাকরণে ধ্বনি পরিবর্তনে স্বরধ্বনির স্থানান্তর
প্রসঙ্গে কথাটি ব্যবহৃত হয়।
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, শব্দস্থিত 'ই' বা 'উ' যথাস্থানে উচ্চারণের পূর্বেই উচ্চারিত হলে, তাকে অপিনিহিতি বলে। যেমন- আজি> আইজ , সাধু> সাউধ। প্রথম উদাহরণে 'ই' 'জ' এর পূর্বে, দ্বিতীয় উদাহরণে 'উ' 'ধ' এর পূর্বে উচ্চারিত হয়েছে। সুকুমার সেনের মতে, বাক্য >বাইক্ক এটিও
অপিনিহিতির উদাহরণ।
২) শ্রুতি ধ্বনি কি?
উ;- দুটি স্বরধ্বনি
পাশাপাশি থাকলে তাদের উচ্চারণে অনেক সময় অসুবিধা হয়, এই অসুবিধা
দূর করার জন্য ওই দুটি স্বরধ্বনির মধ্যে অন্য একটি ধ্বনি এসে যায়, যা প্রথম স্বরধ্বনি থেকে দ্বিতীয় স্বরধ্বনিতে যেতে সাহায্য করে। এর ফলে দুটি স্বরধ্বনির উচ্চারণে
কোন ছেদ পড়ে না। দুটি স্বরধ্বনির মাঝখানে এসে যাওয়া এই ধ্বনিটিকে শ্রুতি
ধ্বনি বলে। যে ধ্বনিটির আগম
হয় সেই ধ্বনির নাম অনুসারে শ্রুতি ধ্বনির
নামকরণ হয়। যেমন- বিপুলা> বেহুলা('হ' শ্রুতি), বানর >বাঁদর('দ' শ্রুতি)।
৩) অযোগবাহ বর্ণ কি?
উঃ- 'ং' ও 'ঃ' এই দুটি বর্ণ কে বলা হয় অযোগবাহ বর্ণ। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার
চট্টোপাধ্যায়ের মতে, অন্য স্বর ও ব্যঞ্জনের সহিত ইহাদের যোগ কল্পিত হয় নাই, ইহারা যেন স্বর ও ব্যঞ্জনমালার বাহিরে
অবস্থান করে। অযোগবাহ নামকরণের কারণ 'ং' ও 'ঃ' উচ্চারণের সময় কোনো
স্বরধ্বনির প্রয়োজন হয় না, অথচ উচ্চারণকালে এরা
নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটায়। তাই বর্ণগুলি স্বর ও ব্যঞ্জন মালার সঙ্গে অযুক্ত(অযোগ) অথচ ধ্বনির কারণে বিশিষ্ট(বাহ), তাই এরা অযোগবাহ বর্ণ।
৪) আশ্রয়স্থানভাগী
বর্ণ কোনগুলো? এ ধরনের নামকরণের কারণ কি?
উ;- 'ং' ও 'ঃ' হল আশ্রয়স্থানভাগী
বর্ণ। এই বর্ণগুলি তার আগের স্বরধ্বনিকে আশ্রয় করে বা অবলম্বন করে উচ্চারিত হয়
।এদের নিজের
কোনো নির্দিষ্ট উচ্চারণ স্থান নেই, যে ধ্বনি আশ্রয়ে উচ্চারিত হয়, তার উচ্চারণ স্থান দখল করে বলে, এদের নাম
আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণ ।যেমন- 'আঃ' (এখানে 'আ'এর উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী 'ঃ' এর উচ্চারণ স্থান কন্ঠ),'ছিঃ'(এখানে 'ই' এর উচ্চারণ স্থান
অনুযায়ী 'ঃ'এর উচ্চারণ স্থান
তালু)।
৫) স্বরভক্তি কথার
অর্থ কি? ব্যাকরণে শব্দটি কোন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়? এই প্রসঙ্গে স্বরভক্তির কোন প্রতিশব্দ ব্যবহৃত হয়? দুটি উদাহরণ দিয়ে স্বরভক্তি বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
উ;- উচ্চারণের সুবিধার জন্য স্বরধ্বনির সাহায্যে সংযুক্ত ব্যঞ্জনকে পৃথক করার রীতিকে
স্বরভক্তি বলে। 'ভক্তি' কথার অর্থ
বিভাগ, পৃথকীকরণ, বিভাজন। তাই স্বর সহযোগে বিভাজনকেই স্বরভক্তি বলে।
স্বরভক্তি কথাটি ব্যাকরণে ধ্বনি পরিবর্তন প্রসঙ্গে
ব্যবহৃত হয়।
স্বরভক্তির প্রতিশব্দ হল বিপ্রকর্ষ।
রত্ন> রতন, প্রকাশ >পরকাশ - এই দুটি হল
স্বরভক্তির উদাহরণ। প্রথম উদাহরণটিতে সংযুক্ত ব্যঞ্জন 'ত্ন' কে ভেঙ্গে মাঝখানে 'অ' এর আগম ঘটেছে এবং দ্বিতীয় উদাহরণটিতে 'প্র' কে ভেঙ্গে মাঝখানে 'অ'এর আগম ঘটেছে। ধ্বনি পরিবর্তনের রীতিকে স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বলে।
৬) বিপ্রকর্ষ কথার
অর্থ কি? ব্যাকরণে কোন
প্রসঙ্গে শব্দটি ব্যবহৃত হয় ? বিপ্রকর্ষের অপর নাম কি? উদাহরণ দিয়ে
বিপ্রকর্ষ বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
উ;- বিপ্রকর্ষ কথাটির অর্থ
হল বিশেষরূপে, প্রকৃষ্টভাবে সৌকর্য সৃষ্টি। উচ্চারণের সরলীকরনের জন্য কিংবা ছন্দের খাতিরে সংযুক্ত ব্যঞ্জন ধ্বনির মধ্যে
স্বরধ্বনি এনে শব্দের
সৌন্দর্য বা সৌকর্য বৃদ্ধি করার রীতি হল বিপ্রকর্ষ।
বিপ্রকর্ষ কথাটি ব্যাকরণে ধ্বনি পরিবর্তন প্রসঙ্গে
ব্যবহৃত হয়।
বিপ্রকর্ষের অপর নাম হল স্বরভক্তি।
রত্ন> রতন, প্রকাশ >পরকাশ - এই দুটি হল স্বরভক্তির
উদাহরণ। প্রথম উদাহরণটিতে সংযুক্ত ব্যঞ্জন 'ত্ন' কে ভেঙ্গে মাঝখানে 'অ' এর আগম ঘটেছে এবং দ্বিতীয় উদাহরণটিতে 'প্র' কে ভেঙ্গে মাঝখানে
'অ'এর আগম ঘটেছে। ধ্বনি পরিবর্তনের রীতিকে
স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ বলে।
৭) স্বরসংগতি কথার
অর্থ কি? কোন উপভাষায় এই জাতীয় ধ্বনি পরিবর্তন বেশি লক্ষ্য করা
যায়, দুটি উদাহরণ দিয়ে স্বরসঙ্গতি বিষয়টি বুঝিয়ে দাও।
উ;- স্বরসংগতি কথার অর্থ
হল স্বরের সংগতি বা সমতা বিধান। একটি
স্বরধ্বনি অন্য স্বরধ্বনির প্রভাবে বা দুটি স্বরধ্বনি পরস্পরের প্রভাবে
পরিবর্তিত হলে স্বরসঙ্গতি
হয়।
রাঢ়ী উপভাষায় স্বরসঙ্গতির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা
যায়।
যেমন -দেশি> দেশি ,পূজা> পূজো - প্রথম উদাহরণটিতে পূর্ববর্তী স্বর 'এ' পরবর্তী স্বর 'ই' এর প্রভাবে প্রভাবিত
হয়ে সমরূপ লাভ করেছে এবং দ্বিতীয় উদাহরণটিতে সংবৃত 'উ' এর প্রভাবে বিবৃত
'আ' অর্ধসংবৃত 'ও' তে পরিবর্তিত হয়ে উচ্চারণ সাম্য রক্ষা করেছে। তাই এই দুটি উদাহরণ স্বরসঙ্গতির উদাহরণ।
৮) সাধু ভাষার 'সাধু' নামকরণের কারণ কি?
উ;- সাধুভাষা শিক্ষিত জন
বৌদ্ধ, মার্জিত রুচির সুষ্ঠু সন্ধি-সমাস সমাকীর্ণ কৃত্তিম ভাষারীতি। এককথায় সাধু ভাষা আটপৌরে নয়, সাধুভাষা সৃষ্টজনের ও সাধুজনের
ভাষা। রামমোহন রায় তাঁর 'বেদান্ত' গ্রন্থে সংস্কৃতে ব্যুৎপত্তি সম্পন্ন লোকের ভাষাকে সাধু
ভাষা বলেছেন।
৯) প্রত্যয়
শব্দটির সাধারণ অর্থ কি? ব্যাকরণে কোন প্রসঙ্গে শব্দটি ব্যবহৃত হয়? প্রত্যয় কত প্রকার, দুটি উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।
উ;-প্রত্যয় শব্দের সাধারণ অর্থ হল বিশ্বাস বা প্রতীতি, যা থেকে নতুন শব্দ গঠনের প্রতীতি জন্মায়।
ব্যাকরণে নতুন শব্দ গঠন কৌশল প্রসঙ্গে প্রত্যয় শব্দটি
ব্যবহৃত হয়।
প্রত্যয় তিন প্রকার - ১.কৃৎ প্রত্যয় ২.তদ্ধিত প্রত্যয় ৩.ধাত্ববয়ব প্রত্যয়।
১০) বিভক্তি কথাটির
সাধারণ অর্থ কি? ভাষার কোন প্রসঙ্গ বোঝাতে বিভক্তি শব্দটি ব্যবহৃত হয়? উদাহরণ দিয়ে ব্যাকরণে ব্যবহৃত বিভক্তি শব্দটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উ;- বিভক্তি (বি-√ভজ্ +তি) কথাটির সাধারণ অর্থ হল বিভাজন বা ভাগ করা। অর্থহীন যে বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ
ধাতু বা শব্দের অর্থকে নানাভাবে বিভক্ত করে, তাকে বিভক্তি
বলে।
বিভক্তি শব্দটি বাংলা ব্যাকরণে পদ গঠন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত
হয়।
বিভক্তি পদের সঙ্গে
যুক্ত হয়ে যেমন পদটিকে বিভিন্ন কারকে বিভক্ত করে, তেমনি ধাতুর
সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন কাল ও পুরুষে বিভক্ত করে। ফলে বাক্যে
বিভক্তিযুক্ত পদটির অর্থগুরুত্ব তার প্রয়োগের উপরে
পরিবর্তিত হয়। যেমন- 'সে 'ভাত' খায়' ('ভাত' শূন্য বিভক্তি, কর্ম কারক), 'ভাতে' মাছি বসেছে' ('এ' বিভক্তি অধিকরণ কারক)।
১১) অনুসর্গকে কর্মপ্রবচনীয় বলা হয় কেন?
উ;- যে সমস্ত অব্যয় স্বতন্ত্রভাবে
বসে, নামপদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক নির্দেশ করে, তাকে অনুস্বর্গ বলে। পাণিনির মতে, যারা পূর্বে
ক্রিয়ার অর্থ প্রকাশ করত কিন্তু বর্তমানে নিরূপিত সম্বন্ধ প্রকাশ করে, তারা হল কর্মপ্রবচনীয়। অসমাপিকা
ক্রিয়াজাত অনুসর্গগুলি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে সেই কাজ সম্পন্ন করে, তাই এরা কর্মপ্রবচনীয় ।
১২) সমাসকে সুনিপুণ
গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন কে ? তাঁর এই তুলনার কারণ
কি?
উ;- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সমাসকে সুনিপুণ গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন।
সুনিপুণ
গৃহিণী যেমন তার সদগুনের দ্বারা কোনো একটি সংসারকে সুখী করে তোলেন, তেমনি সমাস নতুন শব্দ গঠনের মাধ্যমে শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে ।বিভিন্ন অর্থগৌরবের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শব্দসমষ্টিকে সমাস সুমধুর করে তোলে,
তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজকে সুনিপুণ
গৃহিণীর সাথে তুলনা করেছেন।
১৩) সমাস এর কাজ কি?
উ;- সমাসের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলি হল নিম্নরূপ-
১. ভাষার
শব্দবাহুল্যকে বর্জন করে ভাষাকে দৃঢ় ও অর্থব্যঞ্জক করে তোলে।
২. নতুন শব্দ গঠন করে
ভাষার অর্থ প্রকাশ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
৩. একাধিক নতুন শব্দ
সৃষ্টির ফলে শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।
৪. একাধিক পদের
একপদীকরণের ফলে পদের সংহতি স্থাপিত হয়।
১৪) দ্বন্দ্ব
সমাসের নাম দ্বন্দ্ব সমাস কেন?
উ;- দ্বন্দ্ব কথাটির অর্থ
হল 'মিলন' বা 'ঝগড়া'। কিন্তু সমাস প্রসঙ্গে শব্দটিকে আমরা
যুগ্ম বা জোড়া অর্থে ব্যবহৃত হতে দেখি। 'দ্বন্দ্ব' শব্দটি 'দ্বি' এবং 'দ্বি' এই দুটি পদের
একপদীকরণের ফলে সৃষ্ট। এখানে পূর্বপদ এবং পরপদের অর্থ যুগ্মভাবে প্রাধান্য পায় এবং ব্যাসবাক্যে সংযোজক হিসাবে 'ও' 'অথবা' 'এবং' ব্যবহার করা
হয় । শব্দ গঠনের এই বৈশিষ্ট্যগুলি এই শ্রেণীর সমাসে থাকায় 'দ্বন্দ্ব' শব্দানুসারে সমাসের
নাম দ্বন্দ্ব সমাস। যেমন -জোয়ার-ভাঁটা= জোয়ার ও ভাঁটা। এখানে উভয়
পদের অর্থ সমানভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ
জোয়ার-ভাঁটা বললে আমরা দুটোকেই বুঝি।
১৫) দ্বিগু সমাসের
নাম দ্বিগু হল কেন?
উ;- দ্বিগু শব্দটির অর্থ
হল দুই গরুর সমাহারে কৃত।'দ্বি' এবং 'গু' এই দুটি পদের
একপদীকরণের ফলে শব্দটি গঠিত হয়েছে ।এর পূর্বপদ সংখ্যাবাচক বিশেষণ এবং পরপদ বিশেষ্য। সমাসবদ্ধ
পদটিতে একটি সমষ্টি বা সমাহারের অর্থ
বর্তমান। তাই শব্দ গঠনের কৌশল
হিসেবে সমাস আলোচনায় যে
সমস্ত শব্দের সমাস বিশ্লেষণে দ্বিগু শব্দের বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকে, সেগুলিও দ্বিগু সমাস হয় ।এবং এই সাধারন
বৈশিষ্ট্যের কারণে একই ধরনের অর্থ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শব্দগুলি দ্বিগু সমাস হয়।
১৬) তৎপুরুষ কথাটির
সাধারণ অর্থ কি ?
ব্যাকরণে কোন প্রসঙ্গে শব্দটি ব্যবহৃত হয়? তৎপুরুষ নামকরণের কারণ কি?
উ;- 'তৎপুরুষ' কথাটির সাধারণ অর্থ হল
'তস্য পুরুষ' বা 'তার পুরুষ'।
ব্যাকরণের তৎপুরুষ
শব্দটি সমাস প্রক্রিয়ার বা সমাস আলোচনা প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়।
তৎপুরুষ কথাটির অর্থ
তার পুরুষ । এখানে পূর্বপদ 'তার' পরপদ 'পুরুষ', এই দুটি পদের একপদীকরণের ফলে তৎপুরুষ শব্দটি গঠিত হয়েছে। এখানে
পূর্বপদের সম্বন্ধ পদের বিভক্তি 'র' লোপ পেয়েছে এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পেয়েছে। সমাস আলোচনায়
যে সমস্ত একপদীকরণের ক্ষেত্রে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ
পায় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায়, তৎপুরুষ শব্দানুসারে সেই একপদীকরণ প্রক্রিয়াকে তৎপুরুষ সমাস বলা হয়।
১৭) বহুব্রীহি
কথাটির সাধারণ অর্থ কি ? ব্যাকরণে কোন প্রসঙ্গে
শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে? বহুব্রীহি নামকরণের কারণ কি?
উ;-বহুব্রীহি কথাটির সাধারণ অর্থ হল বহু আছে ব্রীহি যার অর্থাৎ অনেক ধান আছে
যার।
ব্যাকরণে সমাসের
ক্ষেত্রে অর্থাৎ একাধিক পদকে এক পদে পরিণত করার প্রসঙ্গে
বহুব্রীহি শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
বহুব্রীহি কথাটির অর্থ
সম্পন্ন ব্যক্তি বা ধনী ব্যক্তি । বহুব্রীহি পদটির পূর্বপদ 'বহু', পরপদ 'ব্রীহি', কোনোটিরই অর্থ প্রাধান্য না পেয়ে শব্দটি একটি অন্য অর্থ প্রকাশ
করছে। সমাস আলোচনার ক্ষেত্রে সমস্যমান পদ গুলি যদি তাদের অর্থ প্রাধান্য
বজায় না রেখে অন্য অর্থ প্রকাশ করে, তখন বহুব্রীহি শব্দানুসারে সেই একপদীকরণকেও বহুব্রীহি
বলা হয়।
১৮) জটিল বাক্য
কাকে বলে ? জটিল বাক্যের জটিলতা কোথায়?
উ;- দুই বা ততোধিক সরল
বাক্য সাপেক্ষ অব্যয় বা নিত্য সম্বন্ধীয় অব্যয় যুক্ত হয়ে বাক্য গঠন করলে তাকে
জটিল বাক্য বলে। জটিল বাক্যে একটি
প্রধান খণ্ডবাক্য থাকে এবং অন্যগুলি অপ্রধান খন্ড
বাক্যে পরিণত হয়ে বিশেষ্য স্থানীয় বা বিশেষণ স্থানীয় বা ক্রিয়া বিশেষণ
স্থানীয় হয়ে জটিলতা সৃষ্টি করে। যেমন- যদি সে আসে তবে
আমি যাব। এই বাক্যে 'সে আসে' এবং 'আমি যাব' বাক্য দুটি 'যদি-তবে' সাপেক্ষ শব্দজোড় যুক্ত হয়ে প্রথম বাক্যটিকে ক্রিয়া বিশেষণ স্থানীয় অপ্রধান
খন্ড বাক্য এবং দ্বিতীয় বাক্যটিকে অপ্রধান খন্ড
বাক্য রূপে সৃষ্টি করে জটিলতা সৃষ্টি করেছে।
১৯) যৌগিক বাক্যের
নাম যৌগিক কেন?
উ;- যৌগিক শব্দের অর্থ যোগ
হওয়া বা যুক্ত হওয়া। যৌগিক বাক্যের দুই বা ততোধিক স্বাধীন, স্বতন্ত্র ,পরস্পর নিরপেক্ষ সরল বাক্য অব্যয় দ্বারা যুক্ত থাকে। যেমন - "আকাশ নির্মেঘ কিন্তু
বৃষ্টি হচ্ছে।" বাক্যটিতে 'আকাশ নির্মেঘ' এবং 'বৃষ্টি হচ্ছে' এই দুটি সরল বাক্য 'কিন্তু' অব্যয় দ্বারা
যুক্ত হয়ে প্রতিটি সরল বাক্যের অর্থ
স্বতন্ত্র বজায় রেখে একটি বাক্য গঠন করেছে। তাই এই ধরনের
বাক্যকে যৌগিক বাক্য বলে।
২০) বাক্য বলতে কী
বোঝায়?
উ;- বাক্য শব্দটির
ব্যুৎপত্তি নির্ণয় করলে পাই √বচ্+ ণ্যৎ। যার অর্থ হল
বলার যোগ্য বা বলার উপযুক্ত। কতকগুলি শব্দ পাশাপাশি বসে বক্তার মনের ভাব কে বলার
উপযুক্ত বা যোগ্য করে তোলে। তাই যে
শব্দসমষ্টি বক্তার মনের
ভাবকে প্রকাশ করে তাকে বাক্য বলে। যেমন- "ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন" বাক্যটিতে বক্তার ইচ্ছা প্রকাশিত হয়েছে।
২১) ক্রিয়ার ভাব
কাকে বলে? ক্রিয়ার ভাব কত প্রকার ?কোন ভাবকে অনুজ্ঞা ভাব বলে?
উ;- ক্রিয়ার যে
প্রকাশভঙ্গির দ্বারা ক্রিয়া সংঘটিত হবার উপায় প্রকাশ পায়, তাকে ক্রিয়ার ভাব বলে।
ক্রিয়ার ভাব কে
সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়- ১.নির্দেশক ভাব
২.অনুজ্ঞা ভাব ৩.সংযোজক ভাব। কোনো কোনো ব্যাকরণবিদ
সংযোজক ভাবকে বাদ দিতে চাই আবার কোনো কোনো ব্যাকরণবিদ ইচ্ছাসূচক ভাব
নিয়ে ক্রিয়ার ভাব মোট চার প্রকার আছে বলে মনে করেন।
আদেশ,নির্দেশ, অনুরোধ, উপদেশ ইত্যাদি মনের
ভাবকে অনুজ্ঞা বলা হয়। ক্রিয়ার যে ভাবের দ্বারা বক্তা উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ ইত্যাদি মনের ভাব প্রকাশ করে তাই অনুজ্ঞা।
২২) আধুনিক
ব্যাকরণে সংযোজক ভাবকে বাদ দেওয়ার কারণ কি?
উ;- অনেক ব্যাকরণবিদ ও
ভাষাতাত্ত্বিক ক্রিয়ার ভাব বলতে নির্দেশক ও অনুজ্ঞা ভাবকে বুঝিয়েছেন। তারা সংযোজক ভাব কে বাদ দিতে চেয়েছেন ,কারণ সংযোজক ভাবের নিজস্ব কোনো ক্রিয়াবিভক্তি নেই। নির্দেশক ভাবের ক্রিয়া বিভক্তি সংযোজক ভাবে ব্যবহৃত হয়। সংযোজক ভাব আসলে একাধিক নির্দেশক ভাবের মিশ্র ফল। যেমন-
"আমি কলকাতা যাবো"(নির্দেশক ভাব)
"যদি সে আসে তাহলে আমি
কলকাতা যাবো"(সংযোজক ভাব)
উপরের উদাহরণ দুটিতে প্রকাশভঙ্গিগত এবং বিভক্তিগত কোনো পার্থক্য নেই।
২৩) ক্রিয়ার
প্রকার কাকে বলে? ক্রিয়ার প্রকার কত প্রকার? নিত্যবৃত্ত প্রকার বলতে কি বুঝায়?
উ;- কর্তা সাপেক্ষে
সমাপিকা ক্রিয়ার অবস্থাকে ক্রিয়ার প্রকার বলা হয়। যে উপায়ে ক্রিয়াপদে বর্ণিত
কাজ ঘটবার প্রকার বা রীতির বোধ জন্মায়, তাই হল প্রকার।
ক্রিয়ার
প্রকার চার ধরনের-১.সাধারণ ২.ঘটমান ৩.পুরাঘটিত ৪.নিত্যবৃত্ত।
নিত্যবৃত্ত কথার অর্থ
হল নিয়মিতভাবে অভ্যস্ত। ক্রিয়ার এই প্রকারের সাহায্যে ক্রিয়ার বর্ণিত কাজটি
নিয়মিতভাবে ঘটার ধরনকে বোঝায়। অর্থাৎ অভ্যাসের কথা জানা যায়। যেমন- "প্রতিদিন মায়ের মুখে মহাভারত শুনিত"।
২৪) প্রযোজক ধাতুকে
বাংলায় ণিজন্ত ধাতু বলা যায় না কেন?
উ;- সংস্কৃতে মৌলিক ধাতুর
শেষে 'নিচ্' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ণিজন্ত
ধাতু গঠিত হয়। যেমন- শিক্ষ + নিচ্= শিক্ষি। 'নিচ্' একটি ধাত্ববয়ব প্রত্যয় কিন্তু বাংলায় মৌলিক ধাতুর শেষে 'নিচ্' প্রত্যয়
ব্যবহৃত হয় না, 'আ' প্রত্যয়
ব্যবহৃত হয়। তাই যেহেতু বাংলা
প্রযোজক ধাতু ণিজন্ত নয়, তাই একে ণিজন্ত ধাতু বলা যায়না।
২৫) ধাত্ববয়ব
প্রত্যয়ের নাম ধাত্ববয়ব কেন?
উ;- 'ধাতু' এবং 'অবয়ব' এই দুটি শব্দ যোগ করে গঠিত হয়েছে ধাত্ববয়ব অর্থাৎ যে
সমস্ত প্রত্যয় ধাতুর দেহ বা অবয়ব গঠন করে, তাই ধাত্ববয়ব।যেমন-;√পড়্ + আ= পড়া,বিষ+আ=বিষা। এই উদাহরণ দুটির 'পড়' ধাতুর শেষে 'আ' এবং 'বিষ' শব্দের শেষে 'আ'প্রত্যয় যুক্ত হয়ে 'পড়া' ও 'বিষা'এই দুটি ধাতু
গঠন করেছে , তাই 'আ' একটি ধাত্ববয়ব
প্রত্যয়।
২৬) আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে
অব্যয়ীভাব সমাসকে বাদ দেওয়ার কারণ কি?
উ;- সংস্কৃতে অব্যয়ীভাব
সমাসে সমাসবদ্ধ পদটি অব্যয়ের ভাব প্রাপ্ত হয়। এই সমাসে পূর্বপদ অব্যয় বা অব্যয় স্থানীয় পদ এবং
পূর্বপদেরই অর্থ প্রাধান্য পায়। কিন্তু বাংলা
ভাষায় এই সমাসবদ্ধ পদ গুলি অব্যয়ের মতো আচরণ করে না, এরা কখনো
বিশেষ্য, কখনো বিশেষণ আবার কখনো
বা ক্রিয়া বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
দুর্ভিক্ষ (বিশেষ্য), প্রতিকূল (বিশেষণ),যথাক্রমে (ক্রিয়া বিশেষণ)।
২৭) ভূতার্থ
অসমাপিকা ক্রিয়া কি?
উ;- ধাতুর সঙ্গে 'ইলে' প্রত্যয় যোগ করে এই অসমাপিকা ক্রিয়া পাওয়া যায়। সংস্কৃতের 'ভাবে সপ্তমী'র ভাব প্রকাশ করে বলে এর নাম ভূতার্থ অসমাপিকা ক্রিয়া।একে সাপেক্ষ- সংযোজক বা সংযোজক অসমাপিকা ও বলে। যেমন-" মেঘ কাটিলে তারা ফুটিবে"।
২৮) ল্যবর্থ
অসমাপিকা ক্রিয়া কি?
উ;- ধাতুর সঙ্গে 'ইয়া' প্রত্যয় যোগে যে অসমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয় তাকে
ল্যবর্থ অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থ কিংবা প্রয়োগের বিচারে এই ধরনের ক্রিয়া
বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াটির আগেই ঘটে গেছে এমন কোনো কাজ বা
ঘটনার প্রতি নির্দেশ করে
। এইজন্য এর অন্য নাম পূর্বক্রিয়া। সংস্কৃত 'ল্যপ' প্রত্যয়ান্ত
শব্দও অনুরূপ অর্থ প্রকাশ করে, এর থেকেই ল্যবর্থ
নামটি এসেছে। যেমন- "তাহার গান শুনিয়া আমার ভালো লাগল"।
২৯) তুমর্থ
অসমাপিকা ক্রিয়া কি
উ;- ধাতুর সঙ্গে 'ইতে' ,'তে' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে
অসমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে তুমর্থ অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। অর্থ বা
প্রয়োগের বিচারে এই ক্রিয়া বাক্যস্থিত কোন পদের হেতু বা নিমিত্ত নির্দেশ করে। এই কারণে এই ক্রিয়ার অন্যনাম নিমিত্তার্থক অসমাপিকা ক্রিয়া। সংস্কৃতে 'সর্তৃ' ,'তুমন'প্রভৃতি প্রত্যয়ের এইরকম অর্থ হয় বলে এই নামটি এসেছে। যেমন- "কাঠ কাটতে জঙ্গলে গেছে"।
৩০) বাংলায়
সম্প্রদান কারক তুলে দেওয়ার পক্ষপাতি কে কে? সম্প্রদান
কারক তুলে দেওয়ার কারণ কি?
উ:- সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলায়
সম্প্রদান কারক তুলে দেওয়ার পক্ষপাতি।
সংস্কৃতে যাকে 'স্বত্ব' ত্যাগ করে কিছু দেওয়া হয়, তাই
সম্প্রদান কারক হয়। বস্তুত কোনো ক্রিয়ার
সম্প্রদানে কর্তার মনোভাব কি তা ব্যাকরণের বিচারের বিষয়
হতে পারে না। সম্প্রদান কারকের জন্য
বাংলায় নির্দিষ্ট কোনো বিভক্তি নেই। সম্প্রদান
কারকে গৌণ কর্মের বিভক্তি
ব্যবহৃত হয়। তাই সম্প্রদান কারক
প্রকৃতপক্ষে বাংলাতে গৌণ কর্ম।
৩১) অনুসর্গকে
সম্বন্ধীয় বলা হয় কেন?
উ;- অনুসর্গ গুলি ক্রিয়ার
দ্যোতক নয়, সম্বন্ধের বাচক নয়, এরা ক্রিয়াপদকে টেনে আনে না। অনুসর্গ গুলি শুধু সম্বন্ধের ভেদক মাত্র। অনুসর্গ গুলি ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদের সম্বন্ধকে পরিস্ফুট করে। তাই অনুসর্গ গুলিকে সম্বন্ধীয় বলা হয়।