উপসর্গ - অনুসর্গ - বিভক্তি - নির্দেশক
১) বিভক্তি কথাটির সাধারণ অর্থ কি? ভাষার কোন প্রসঙ্গ বোঝাতে
বিভক্তি শব্দটি ব্যবহৃত হয়? উদাহরণ দিয়ে ব্যাকরণে ব্যবহৃত বিভক্তি শব্দটির তাৎপর্য
বুঝিয়ে দাও।
উ;- বিভক্তি (বি-√ভজ্ +তি) কথাটির
সাধারণ অর্থ হল বিভাজন বা ভাগ করা। অর্থহীন যে বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছ ধাতু বা শব্দের অর্থকে
নানাভাবে বিভক্ত করে, তাকে বিভক্তি বলে।
বিভক্তি শব্দটি বাংলা ব্যাকরণে পদ গঠন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়।
বিভক্তি পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যেমন পদটিকে বিভিন্ন কারকে বিভক্ত করে, তেমনি ধাতুর সঙ্গে
যুক্ত হয়ে বিভিন্ন কাল ও পুরুষে বিভক্ত করে। ফলে বাক্যে বিভক্তিযুক্ত পদটির অর্থগুরুত্ব তার
প্রয়োগের উপরে পরিবর্তিত হয়। যেমন- 'সে 'ভাত' খায়' ('ভাত' শূন্য বিভক্তি, কর্ম কারক), 'ভাতে' মাছি বসেছে' ('এ' বিভক্তি অধিকরণ কারক)।
২) বিভক্তি
কাকে বলে? বিভক্তি কত প্রকার ও কী কী ?
যে বর্ণ বা
বর্ণগুচ্ছ শব্দ বা ধাতুর সাথে যুক্ত হয়ে পদ গঠন করে এবং বাক্যের
মধ্যে পদগুলির ভূমিকা, পারস্পরিক
সম্পর্ক ও বৈশিষ্ট্যকে স্পষ্ট করে, তাকে
বিভক্তি বলে।
বিভক্তি দুই
প্রকার - ১: শব্দবিভক্তি ও
২: ধাতুবিভক্তি বা ক্রিয়াবিভক্তি।
৩)
শব্দ বিভক্তি কাকে বলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
যে বর্ণ বা
বর্ণসমষ্টি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দকে নামপদে পরিণত করে বাক্যে
ব্যবহারযোগ্য করে তোলে, তাকে
শব্দবিভক্তি বলে। শব্দবিভক্তি নামপদের বচন,সম্বন্ধ ও কারক
নির্দেশ করে ।
যেমন – শ্যামলের মা শ্যামলকে
একটি কলম দিলেন । এখানে ‘শ্যামল’ শব্দটির সঙ্গে ‘এর’ ও ‘কে’ যুক্ত হয়ে শ্যামল
শব্দটিকে বাক্যে ব্যবহারের যোগ্য করে তুলেছে , এবং ‘মা’ ও ‘দিলেন’ ক্রিয়াপদের
সঙ্গে তার সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করছে । তাই ‘এর’ ,’কে’ হল বিভক্তি । আরও কয়েকটি
উদাহরণ হল – এ,তে,র,য় ইত্যাদি ।
৪) ক্রিয়া বিভক্তি কাকে বলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
যে বর্ণ ব বর্ণ সমষ্টি ধাতু
বা ক্রিয়ামূলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে ,তাকে ধাতুবিভক্তি বা
ক্রিয়াবিভক্তি বলে । ধাতু বিভক্তি ক্রিয়াপদের কাল ও পুরুষ নির্দেশ করে ।
যেমন- তিনি প্রতিদিন
গীতাঞ্জলি পড়েন । এখানে ‘পড়েন’ ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে আমরা ‘পড়্+এন’ পাই ।
‘পড়্’ একটি ধাতু । ‘পড়্’ এককভাবে বাক্যে
ব্যবহৃত হতে পারে না । ‘পড়্’ এর সঙ্গে ‘এন’ যুক্ত হয়ে তাকে ক্রিয়াপদে পরিণত করেছে
,তাই ‘এন’ একটি ধাতুবিভক্তি বা ক্রিয়াবিভক্তি ।
আরও কয়েকটি ধাতুবিভক্তি হল-
এ,ইল,ইলাম,অ,ও ইত্যাদি ।
৫) মৌলিক
বিভক্তি কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
যে বিভক্তি অন্য
কোনো বিভক্তির রূপান্তরিত রূপ নয় অর্থাৎ যে বিভক্তিগুলি অন্য কোনো
বিভক্তি থেকে সৃষ্টি হয়নি, তাদের
মৌলিক বিভক্তি বলে।
মৌলিক শব্দবিভক্তিগুলি হল - কে, রে, র, এ, তে। অন্য সব বিভক্তি এই বিভক্তি থেকেই পাওয়া যায়।
৬) সাধিত
বিভক্তি কাকে বলে ? উদাহরণ দাও ।
যে বিভক্তিগুলি অন্য
বিভক্তির রূপান্তরিত রূপ অর্থাৎ অন্য কোনো বিভক্তি থেকে উৎপন্ন হয়, তাদের আমরা সাধিত বিভক্তি
বলতে পারি। যেমন: কে>একে, রে>এরে, র>এর/দের/কার , এ>য়, তে>এতে প্রভৃতি।
৭) তির্যক
বিভক্তি কাকে বলে ? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
সংস্কৃতে প্রতিটি কাককের
জন্য সুনির্দিষ্ট বিভক্তি থাকলেও বাংলায় সংস্কৃতের মতো নির্দিষ্ট কারকের জন্য নির্দিষ্ট
বিভক্তি নেই । বাংলাতে যে সমস্ত বিভক্তি একাধিক কারকে বা সব কারকে ব্যবহৃত হয় তাকে
তির্যক বিভক্তি বলে । তির্যক বিভক্তি যে কোনো পদকে ক্রিয়াপদের সঙ্গে তির্যকভাবে
অন্বিত করে ।
যেমন- ‘গ্রামে লোকে একমনে
পূজয়ে দেবতাগণে খড়্গে ছাগে কাটে লোকহিতে।’ এখানে অধিকরণ কারকের বিভক্তি ‘এ’ অপাদান
কারক ছাড়া সব কারকে ব্যবহৃত হয়েছে । এইভাবে যখন এক কারকের বিভক্তি
অন্য কারকে প্রযুক্ত হয়, তখন তাকে
বলা হয় তির্যক বিভক্তি। তাই ‘এ’ একটি তির্যক বিভক্তি । এছাড়া ‘কে’ , ‘তে’ হল তির্যক বিভক্তির
উদাহরণ ।
এইভাবে যখন এক কারকের বিভক্তি
অন্য কারকে প্রযুক্ত হয়, তখন তাকে
বলা হয় তির্যক বিভক্তি।
৮ )
যথার্থ বিভক্তি কাকে বলে ?
যে
সমস্ত বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দকে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী
করে তোলে , সম্বন্ধ ও কারক নির্ণয়ে সাহায্য করে তাদের যথার্থ বিভক্তি বলে । এই
সমস্ত বিভক্তি পদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকে । এদের স্বতন্ত্র কোনো অস্তিত্ব
নেই । এ, য় , কে,রে ,তে এই বিভক্তি গুলি হল যথার্থ বিভক্তি ।
যেমন-
‘ঘরেতে ভ্রমর এলো গুনগুনিয়ে ।’ এখানে ‘তে’ বিভক্তিটি ঘর শব্দের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদে পরিণত করেছে ।
৯)
বিভক্তি স্থানীয় পদ বলতে কী বোঝায় উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও ।
বাংলা ব্যাকরণে সমস্ত কারকের জন্য নির্দিষ্ট
বিভক্তি নেই , তাই অনেক সময় অনুসর্গ জাতীয় কিছু অব্যয়কে কারক বোঝানোর জন্য ব্যবহার
করা হয় । যে সমস্ত অব্যয় অবিকৃতরূপে বা বিভক্তিযুক্ত হয়ে বিশেষ্য বা বিশেষণের
পরে বসে পূর্ববর্তী পদকে অন্বিত করে তাদের বিভক্তি স্থানীয় পদ বলে । মূল
শব্দ-বিভক্তি ছাড়া কারক বোঝানোর জন্য এই অব্যয় বা অনুসর্গগুলি ব্যবহৃত হয় । যেমন
– ‘সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু’ । এখানে ‘লাগিয়া’ পদটি কারক নির্ণয়ে সাহায্য করছে ,তাই এইটি
বিভক্তি স্থানীয় পদ ।
১০) নির্দেশক
কাকে বলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও । নির্দেশক কত প্রকার ?
যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ শব্দ বা পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বচন
নির্দেশ করে ও নির্দিষ্টতা প্রকাশ করে তাকে নির্দেশক বলে।
নির্দেশকগুলি হল পরাধীন রূপমূল , এদের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র কোনো
অর্থ নেই । নির্দেশক এককভাবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না । যেমন- ‘ঐ যে লোকটা পার
হয়ে যায় কাঁসাই নদীর সাঁকো। ’ এখানে ‘লোক’
শব্দটির সঙ্গে ‘টা’ যুক্ত হয়ে বচন নির্দেশ করছে ও শব্দটিকে নির্দিষ্ট করেছে
। তাই এটি নির্দেশক ।
নির্দেশক দুই প্রকার: পদাশ্রিত নির্দেশক ও শব্দাশ্রিত নির্দেশক।
১১) অনুসর্গ কাকে বলে উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও
।
অনুসর্গ
শব্দের ব্যুৎপত্তি করলে হয় অনু-সৃজ+অ । অর্থাৎ
যা শব্দের পরে বসে নতুন শব্দ গঠনে সাহায্য করে । যে সমস্ত অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনামের
পরে বসে পদটিকে বাক্যের সঙ্গে অন্বিত করে তাদের অনুসর্গ বলে ।
যেমন- ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কমনে
আসে যায়।’ ‘ভিতর’ পদটি ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘খাঁচা’ পদটির অন্বয় স্থাপন করেছে ।
তাই ‘ভিতর’ হল একটি অনুসর্গ ।
১২) অনুসর্গকে কর্মপ্রবচনীয় বলা হয় কেন?
উ;- যে সমস্ত অব্যয়
স্বতন্ত্রভাবে বসে, নামপদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক নির্দেশ করে, তাকে অনুস্বর্গ বলে। পাণিনির মতে, যারা পূর্বে ক্রিয়ার
অর্থ প্রকাশ করত কিন্তু বর্তমানে নিরূপিত সম্বন্ধ প্রকাশ করে, তারা হল
কর্মপ্রবচনীয়। অসমাপিকা ক্রিয়াজাত
অনুসর্গগুলি আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে সেই কাজ সম্পন্ন করে, তাই এরা কর্মপ্রবচনীয় ।
১৩) অনুসর্গকে সম্বন্ধীয় বলা হয় কেন?
উ;- অনুসর্গ গুলি
ক্রিয়ার দ্যোতক নয়, সম্বন্ধের বাচক নয়, এরা ক্রিয়াপদকে টেনে আনে না। অনুসর্গ গুলি শুধু
সম্বন্ধের ভেদক মাত্র। অনুসর্গ গুলি ক্রিয়াপদের সঙ্গে নাম পদের সম্বন্ধকে পরিস্ফুট করে। তাই অনুসর্গ গুলিকে সম্বন্ধীয় বলা হয়।
১৪) বিভক্তি ও অনুসর্গের পার্থক্য আলোচনা কর ।
বিভক্তি ও
অনুসর্গ দুটোই শব্দের পরে বসে পদগঠন করে ও শব্দের অর্থ সুনির্দিষ্ট করে । কিন্তু এদের
মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে । পার্থক্যগুলি হল - ( পয়েন্ট আকারেই দিলাম )
১) অনুসর্গের স্বাধীন অর্থ ও স্বাধীন ব্যবহার আছে, বিভক্তির স্বাধীন অর্থ ও স্বাধীন
ব্যবহার নেই।
২) বিভক্তি পদের
সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় থাকে। অনুসর্গ পদের পরে আলাদা ভাবে বসে।
৩) বিভক্তি কোনো পদ
নয়। অনুসর্গ নিজে এক ধরনের অব্যয় পদ।
৪) বিভক্তি শব্দ ও
ধাতু, উভয়ের সাথে যুক্ত হতে পারে। অনুসর্গ শুধুমাত্র পদের পরে বসে, ধাতুর পরে বসে না।
৫) বিভক্তি শব্দের পূর্বে যুক্ত হতে পারে না
। কিন্তু অনুসর্গ কখনো কখনো পূর্বে ব্যবহৃত হতে পারে ।
১৫) বিভক্তি ও নির্দেশকের
পার্থক্য আলোচনা কর ।
বিভক্তি ও নির্দেশক, উভয়েই পরাধীন রূপমূল ,স্বাধীন অর্থ নেই। বাক্যের মধ্যে এদের
স্বাধীন ব্যবহার নেই। কিন্তু এদের মধ্যে বেশকিছু পার্থক্য আছে -
১) বিভক্তি কারক বা সম্বন্ধ নির্দেশ করে । নির্দেশক শব্দের পরে
যুক্ত হয়ে বচন নির্দেশ করে।
২) নির্দেশকের পর বিভক্তি
যুক্ত হতে পারে। বিভক্তির পর নির্দেশক যুক্ত হতে পারে না।
৩) শব্দে বিভক্তিযুক্ত হলেই উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় কিন্তু নির্দেশক যুক্ত হলেও
অনেক সময় বিভক্তি যোগ করার প্রয়োজন হয় ।
৪) বিভক্তি অন্বয় সৃষ্টি
করে। নির্দেশক পদকে বিশেষভাবে নির্দেশ করে ।
৫) বিভক্তির পরিবর্তে
অনুসর্গ ব্যবহৃত হতে পারে। নির্দেশকের পরিবর্তে অন্য কিছু ব্যবহৃত হতে পারে না।
৬) বিভক্তি ধাতুর পরেও যুক্ত হয়। নির্দেশক ধাতুর
পরে যুক্ত হতে পারে না।
৭) বিভক্তি ধাতু বা শব্দকে
পদে পরিণত করে , নির্দেশক করে না ।
১৬) অনুসর্গের বৈশিষ্ট্য
আলোচনা কর ।
অনুসর্গের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য
হল -
১) অধিকাংশ সময় অনুসর্গ নাম পদের পরে বসে।
২) তবে কখনো
কখনো অনুসর্গ নাম পদের আগে বসতে পারে। যেমন- বিনা মেঘে বজ্রপাত।
৩) অনুসর্গ
শব্দের অর্থের পরিবর্তন করে না।
৪) অনুসর্গের
নিজস্ব অর্থ আছে। তাই বাক্যের মধ্যে অনুসর্গের স্বতন্ত্র প্রয়োগ আছে।
৫) অনুসর্গ
বিভক্তির মতো কাজ করে।
৬) শব্দের
পরে শুধু একটা অনুসর্গের ব্যবহার করা যায়।
৭) অনুসর্গ
অব্যয় জাতীয় এবং ক্রিয়াজাত দুই প্রকার হতে পারে।
১৭) নির্দেশক
ও অনুসর্গের পার্থক্য আলোচনা কর ।
নির্দেশকের সঙ্গে অনুসর্গের পার্থক্যগুলি হল
১) অনুসর্গের
নিজস্ব অর্থ আছে, নির্দেশক এর নিজস্ব অর্থ নেই।
২) অনুসর্গ
বাক্যের মধ্যে
স্বতন্ত্রভাবে বসতে পারে, নির্দেশক বাক্যে পৃথকভাবে বসতে পারে না।
৩) অনুসর্গ
হলো অব্যয় পদ, নির্দেশক হলো
অর্থহীন ধ্বনিগুচ্ছ বা ধ্বনি।
১৮) নির্দেশকের বৈশিষ্ট্য
আলোচনা কর ।
নির্দেশকগুলি ভাষার সম্পদ
বিশেষ। নির্দেশকের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
১) নির্দেশক প্রত্যয়ের
মতো নতুন শব্দ গঠন করে না , শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পদকে নির্দিষ্ট করে ।
২) নির্দেশক অব্যয় নয়
, অব্যয়ের নিজস্ব অর্থ আছে,স্বাধীন ব্যবহার আছে কিন্তু নির্দেশকের স্বাধীন ব্যবহার
নেই ।
৩) নির্দেশক অনেক সময়
ক্রিয়ার সঙ্গেও যুক্ত হতে পারে । যেমন - কাজ করবে না তো খাবেটা কী ?
৪) নির্দেশক কখনো কখনো
শব্দ বা পদের পূর্বে বসে । যেমন – খান দশেক লুচি খেলাম ।
১৯)উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর ।
১। যেসব
অব্যয় শব্দের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই, কিন্তু অন্য শব্দের আগে যুক্ত হয়ে সে শব্দের নতুন
অর্থ সৃষ্টি করে, সেসব অব্যয় শব্দকেই উপসর্গ বলে।
যেসব অব্যয় বিশেষ্য ও সর্বনামের পরে বসে বিভক্তির কাজ করে, সেগুলোকে অনুসর্গ
বলে।
২। উপসর্গ
নামবাচক বা কৃদন্ত শব্দের আগে বসে কিন্তু অনুসর্গ বিশেষ্য ও সর্বনাম শব্দের পরে বসে।
উপসর্গ
– প্রবাস ( প্র-বস্+ঘঞ্) , ‘প্র’ উপসর্গ
। তিনি প্রবাস থেকে ফিরলেন । ‘থেকে’ অনুসর্গ ।
৩। উপসর্গ
মূল শব্দের অর্থ পরিবর্তন করে কিন্তু অনুসর্গ মূল শব্দের অর্থ ঠিক রাখে।
৪। উপসর্গ
বিভক্তির কাজ করে না , অনুসর্গ বিভক্তির কাজ করে।
৫। উপসর্গ
কোনো শব্দের সঙ্গে পৃথকভাবে ব্যবহূত হতে পারে না , অনুসর্গ পৃথকভাবে ব্যবহূত হয়।
৬। উপসর্গ
নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে , অনুসর্গ নতুন শব্দ তৈরি করতে পারে না।
২০)‘উপসর্গের অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অর্থ দ্যোতকতা
আছে’—আলোচনা করো।
যে সকল অব্যয় মূল শব্দ বা ধাতুকে অবলম্বন করে
ওই ধাতুর নানা অর্থের সৃষ্টি করে তাদেরকে উপসর্গ বলা হয়। বাংলা ভাষায় ব্যবহূত উপসর্গগুলোর
কোনো অর্থবাচকতা নেই, শুধু মূল শব্দ বা ধাতুর পূর্বে এরা ব্যবহূত হলেই এদের অর্থ দ্যোতকতা
শক্তি দৃষ্ট হয়।
যেমন - ‘অনা’ একটি উপসর্গ। এর নিজের কোনো অর্থ
নেই। কিন্তু ‘বৃষ্টি’ শব্দের পূর্বে ‘অনা’ শব্দটি ব্যবহূত হয়ে ‘অনাবৃষ্টি’ তেমনি এটা ‘আচারের’ পূর্বে ব্যবহূত হয়ে অনাচার
(আচারবহির্ভুত অর্থে) এবং সৃষ্টির পূর্বে ব্যবহূত হয়ে অনাসৃষ্টি (অদ্ভুত অর্থে)
এরূপে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ দ্যোতকতা সৃষ্টি করেছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উপসর্গসমূহের নিজস্ব কোনো বিশেষ অর্থবাচকতা নেই বটে, কিন্তু অন্য
শব্দের পূর্বে যুক্ত হলেই এদের অর্থদ্যোতকতা বা সংশ্লিষ্ট শব্দের নতুন অর্থ সৃজনের
ক্ষমতা সৃষ্টি হয়।
২১) ভাষায় উপসর্গের ভুমিকা আলোচনা কর ।
উপসর্গগুলি হল অর্থহীন
অব্যয়জাতীয় শব্দাংশ , এদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই । কিন্তু উপসর্গগুলি বিভিন্নভাবে শব্দ
বা ধাতুর অর্থকে প্রভাবিত করে ।
উপসর্গ নতুন শব্দ গঠন
করে । প্র+ভাত = প্রভাত ।
ধাতু বা শব্দের অর্থকে
পূর্ণতা দেয় । সম্ +পূর্ণ = সম্পূর্ণ
শব্দের অর্থকে সম্প্রসারিত
করে । প্র+দান =প্রদান
শব্দ বা ধাতুর অর্থের
পরিবর্তন করে । আ + দান = আদান ( নেওয়া , কিন্তু
দান মানে নেওয়া )
শব্দের অর্থের সংকোচন
করে ।
২২) উপসর্গের প্রয়োজনীয়তা
কী ?
উপসর্গগুলি হল অর্থহীন
অব্যয়জাতীয় শব্দাংশ , এদের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই । কিন্তু উপসর্গগুলি বিভিন্নভাবে শব্দ
বা ধাতুর পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে , শব্দের অর্থকে পূর্ণতা দেয়,সম্প্রসারিত করে,পরিবর্তিত
করে । উপসর্গ নতুন শব্দ গঠন করে শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে । এর সার্থক প্রয়োগে ভাষার
অভ্যন্তরীণ শক্তি ও ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পায় । আসলে শব্দগঠন ও অর্থের দিক দিয়ে বৈচিত্র্য
সম্পাদন করাই উদ্দেশ্য ।
২৩) কীভাবে উপসর্গ নতুন
শব্দগঠন করে দেখাও
উপসর্গ হলো অর্থহীন অব্যয়জাতীয়
শব্দাংশ ,যা ধাতু বা শব্দের আগে ব্যবহৃত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে । হার (হৃ+ঘঞ্) শব্দের
আগে যথাক্রমে আ, উ, উপ, প্র, পরি, বি, সম ইত্যাদি
উপসর্গ যোগ করে ভিন্নভিন্ন অর্থপূর্ণ শব্দ গঠন করা যায়। যেমন - আহার (খাওয়া), উদ্ধার
(রক্ষা), উপহার (গিফ্ট), প্রহার (মারা), পরিহার (পরিত্যাগ), বিহার (ভ্রমণ), সংহার
(হত্যা) ইত্যাদি। অর্থাৎ উপসর্গের ধাতু বা নামশব্দের আগে বসে নতুনশব্দ গঠন ,শব্দের
অর্থ পরিবর্তন, সম্প্রসারণ ও সংকোচন করা এবং অর্থের পূর্ণতা দান করার ক্ষমতা আছে। আসলে শব্দগঠন
ও অর্থের দিক দিয়ে বৈচিত্র্য সম্পাদন করাই উদ্দেশ্য ।