ধ্বনি পরিবর্তন
ধ্বনি
পরিবর্তন কী ?
ধ্বনিপরিবর্তনের কারণ :
একটি ভাষার ধ্বনি বিভিন্ন কারণে পরিবর্তন হতে পারে-
১) ভৌগোলিক অবস্থানজনিত কারণ :
ভৌগোলিক অবস্থানজনিত কারণে ধ্বনি পরিবর্তন নির্ভর করে -ভৌগোলিক অবস্থানের কারণের ওপর জলবায়ু নির্ভর করে এবং তারফলে শারীরিক গঠন ও অভিযোজন প্রক্রিয়া নির্ভরশীল l এই জন্য পার্বত্যাঞ্চলের মানুষের ও সমতলের উচ্চারণের পার্থক্য লক্ষ করা যায় l যে অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি প্রতিকূল ও কঠোর, সেখানকার উচ্চারণ বেশি কঠোর ও কর্কশ এবং যেখানের ভূপ্রকৃতি বৈচিত্র্যময়, নির্মল, সেখানকার ভাষার উচ্চারণে কোমলতা সৌন্দর্য্যতা বেশি – যেমন -ইংরেজি ও জার্মান ভাষা অপেক্ষাকৃত রূঢ় ভাষা আর ফরাসি স্পেন, ইতালীয় , ইতালীয় ভাষা অপেক্ষাকৃত মধুর ও কোমল,- অনেক ভাষাবিদ এই ধারনা পোষণ করেন l
২) সমাজিক অবস্থান :
শান্তিপূর্ণ অবস্থানে কোনো দেশের ভাষার উচ্চরণগত বিকৃত কম থাকে l কিন্তু যে দেশে যুদ্ধ – বিগ্রহ অথবা বিদেশীদের আগমন ক্রমাগত হতেই থাকে, সেখানকার ভাষার ধ্বনি পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেড়েই যায় l আমাদরে ভারতবর্ষের কথাই যদি ধরি – নিয়মিত বিদেশীদের আগমনে ও যোগাযোগের ফলে ভাষার যে ধ্বনিগত পরিবর্তন হয়েছে তা লক্ষণীয় l
যেমন, শ, স, ষ, এই তিন ধরনের শিসধ্বনি পশ্চিমবঙ্গের মান্য চলিত ভাষার মধ্যে থাকলেও মূল ধ্বনি হিসেবে মান্যতা পেয়েছে “তালব্য – শ “ই l কিন্তু এই বাংলা ভাষাভাষীর বাংলদেশে “দন্ত্য -স ” দারুণ ভাবে প্রচলিত l এঁর কারণ হিসেবে ভাষাবিদদের যুক্তি – মধ্যযুগ থেকেই মুসলমান শাসনের ফলে ফরাসি ভাষার প্রভাবে এই ধ্বনির পরিবর্তন ঘটেছে l
৩) অন্য ভাষার সাহচর্যজনিত কারণঃ
বিভিন্ন ভাষার সংস্পর্শে বাংলা ভাষা আসার সূত্রে তার নিজেস্ব ভাষা কিছু কিছু বদলে গেছে l যেমন – বাংলা ‘বন্ধ’ শব্দটি হিন্দি ভাষার প্রভাবে ‘বন্ধ্ ‘ অথবা ‘বন্ধ্’।
সাধরণ বাংলা বাক্যের ভেতরেই এই রকম অন্য ভাষার প্রভাব থেকে গেছে l
যেমন – নেতাজী সুভাষ অমরহে ।
৪) ঐতিহাসিক
কারণ ঃ- কালের গতির সঙ্গে তাল রেখে শব্দস্থিত ধ্বনির পরিবর্তন
হতে পারে।
যেমন- সিন্ধু> হিন্দু , ঘোটক> ঘোড়া
৫) শারীরিক ও মানসিক কারণ :
(ক) বাগযন্ত্রের ত্রুটিজনিত কারণ :
বাক্য
বিনিময়ের ক্ষত্রে যদি বক্তার জিহ্বার সমস্যা থাকে তাহলে উচ্চারণে মূর্ধণ্যীভবন।
যেমন –
সেই
বক্তা “দিন দুনিয়ার
হাল বদলে গেছে,
বলতে
গিয়ে বলেন –
” ডিন
ডুনিয়ার হাল বডলে গেঠে”l
(খ) শ্রোতার শ্রবণ ত্রুটিজনিত কারণ :
শ্রোতার
শ্রবণ সমস্যা থাকলে বক্তার বক্তার প্রকৃত উক্তি শ্রোতার কানে প্রকৃত উচ্চরণ বিকৃত
ভাবে পৌঁছয় এবং তা উচ্চরণ কালে বিকৃত উচ্চরণই হয়ে যায় l
(গ) অশিক্ষা জনিত কারণ :
অশিক্ষিত
মানুষরা শব্দের প্রকৃত উচ্চরণ না জানার ফলে অথবা জানা শব্দই চর্চার অভাবে কঠিন
শব্দ সহজ করে উচ্চরণ করার প্রবণতা থাকে l ‘নীলদর্পণ ‘ নাটকে আদুরি ‘ ম্যাজিষ্টেট
সাহেব ‘
উচ্চরণ
করতে না পেরে ‘মাছের টক’ বলে উচ্চরণ
করেছে l
অনুরূপ
ভাবে –
‘গভর্নমেন্ট
‘
কে
”গর্মেন্ট ‘ বলেন l
(ঘ)
মানসিক কারণের মধ্যে শ্বাসাঘাত, অন্যমনস্কতা , লোকনিরুক্তি, সাদৃশ্য, অন্ধবিশ্বাস অ
কুসংস্কার,
বিশুদ্ধিপ্রবণতা, ভাবপ্রবণতা
ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
ধ্বনি পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি :
ভাষাবিজ্ঞানীরা
ধ্বনি পরিবর্তনের চারটি প্রধান রীতির কথা উল্লেখ করেছেন।যথা –
1) ধ্বনিলোপ 2) ধ্বনির আগম 3) ধ্বনির
রূপান্তর 4) ধ্বনির স্থানান্তর
ধ্বনিলোপ :
ধ্বনিলোপ
প্রধানত দুই প্রকার । ক) স্বরধ্বনিলোপ খ)
ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ
ক)
স্বরধ্বনিলোপ :
উচ্চারণের
সময় কিছু কিছু শব্দের এক বা একের বেশি স্বরধ্বনি লোপ পেলে তাকে স্বরধ্বনিলোপ
বলে।স্বরধ্বনি লোপ পায় তিন রীতিতে ।যথা – আদি স্বরলোপ, মধ্য স্বরলোপ, অন্ত্যস্বরলোপ।
১) আদি স্বরলোপ : শব্দের আদিতে অবস্থিত স্বরধ্বনিটি লুপ্ত হলে তাকে আদি-স্বরলোপ বলা হয়।
২) মধ্য স্বরলোপ : শব্দ
মধ্যস্থিত স্বরধ্বনির লোপ পাওয়ার প্রক্রিয়ার নাম মধ্য-স্বরলোপ বা সম্প্রকর্ষ। যেমন- নাতিনী > নাতনি, ভাগিনী > ভাগনি, জানালা > জানলা , ভগিনী > ভগ্নী , নারিকেল > নারকেল
ইত্যাদি।
৩)অন্ত্য-স্বরলোপ : শব্দের
শেষে থাকা স্বরধ্বনির লোপকেই অন্ত্য-স্বরলোপ বলা হয় ।
যেমন- রাশি > রাশ, রাতি > রাত ইত্যাদি।
খ)
ব্যঞ্জনধ্বনিলোপ :
পদের
আদি- মধ্য বা অন্তে অবস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনির লোপ পাওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যঞ্জনলোপ বলে।
স্বরধ্বনির লোপের মতোই ব্যঞ্জনধ্বনিলোপকেও তিনটি প্রকারে বিভাজন করা সম্ভব।যথা – আদি-ব্যঞ্জনলোপ, মধ্য-ব্যঞ্জনলোপ, অন্ত্য-ব্যঞ্জনলোপ।
আদি
ব্যঞ্জনলোপ :
শব্দের আদিতে থাকা ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পাওয়ার পদ্ধতিকে আদি-ব্যঞ্জনলোপ বলা হয় । যেমন
: স্থান
> থান , রুই> উই ইত্যাদি।
মধ্যব্যঞ্জনলোপ : শব্দের মাঝে
থাকা ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পাওয়ার পদ্ধতিকে মধ্যব্যঞ্জনলোপ বলা হয়
অন্ত্যব্যঞ্জনলোপ : শব্দের অন্ত্যে থাকা ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ পাওয়ার
পদ্ধতিকে অন্ত্যব্যঞ্জনলোপ বলা হয়
র-কার লোপ : আধুনিক চলিত
বাংলায় অনেক ক্ষেত্রে র-কার লোপ পায় এবং পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয়। যেমন : তর্ক>তক্ক, করতে>কত্তে, মারল>মাল্ল, করলাম>কল্লাম।
হ-কার লোপ : আধুনিক চলিত
ভাষায় অনেক সময় দুই স্বরের মাঝামাঝি হ-কারের লোপ হয়। যেমন : পুরোহিত >পুরুত, গাহিল>গাইল, চাহে>চায়, সাধু>সাহু>সাউ, আরবি-আল্লাহ>বাংলা-আল্লা, ফারসি-শাহ্>বাংলা-শা
ইত্যাদি।
সমাক্ষর
লোপঃ
একই
ধ্বনি একই শব্দে একের বেশি থাকলে সেগুলোর একটি মাত্র অবশিষ্ট থেকে অন্যগুলো লোপ
পাওয়ার রীতিকে সমাক্ষর লোপ বলে। যেমন: ছোটদিদি˃ছোটদি, বড়দিদি˃বড়দি, ছোটদাদা˃ছোটদা, বড়কাকা˃বড়কা
ইত্যাদি।
ধ্বনির আগম :
ধ্বনির
আগমের প্রধান ভাগ দু'টি। ক) স্বরাগম খ ) ব্যঞ্জনাগম
ক) স্বরাগমঃ
উচ্চারণের
সুবিধার জন্য শব্দের আদিতে , মধ্যে বা অন্তে স্বরধ্বনির আগমনকে
স্বরাগম বলে ।
স্বরাগম
তিন প্রকার।যথা – ক) আদি স্বরাগম খ) মধ্য স্বরাগম গ) অন্ত্যস্বরাগম
ক)
আদি স্বরাগম-
উচ্চারণের
সুবিধার জন্য বা অন্য কোনো কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি এলে তাকে বলে আদি
স্বরাগম। যেমন : স্কুল>ইস্কুল, স্টেশন>ইস্টিশন।
এরূপ - আস্তাবল, আস্পর্ধা।
খ)
মধ্য স্বরাগম
উচ্চারণের
সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। একে বলা হয় মধ্য
স্বরাগম বা বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি। যেমন :
অ
: রত্ন>রতন, ধর্ম>ধরম, স্বপ্ন>স্বপন, হর্ষ>হরষ ইত্যাদি।
ই
: প্রীতি>পিরীতি, ক্লিপ>কিলিপ, ফিল্ম>ফিলিম
ইত্যাদি।
উ
: মুক্তা>মুকুতা, তুর্ক>তুরুক, ভ্রু>ভুরু
ইত্যাদি।
এ
: গ্রাম>গেরাম, স্রেফ>সেরেফ
ইত্যাদি।
ও
: শ্লোক>শোলোক
ইত্যাদি।
গ)
অন্ত্যস্বরাগম
কোনো
কোনো সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে। এরূপ স্বরাগমকে বলা হয়
অন্ত্যস্বরাগম। যেমন : বেঞ্চ>বেঞ্চি, সত্য>সত্যি
ইত্যাদি।
স্বরভক্তি বা
বিপ্রকর্ষ বা মধ্যস্বরাগম-
মধ্যস্বরাগমের
অপর নাম স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ ।স্বরভক্তি কথার অর্থ স্বর দিয়ে ভক্তি বা
ভাগ।বিপ্রকর্ষ শব্দের অর্থ ব্যবধান । বি-প্র-কর্ষ – বিশেষ রুপে প্রকৃষ্টভাবে সৌকর্য-সৃষ্টি ।মাঝে
স্বর এসে ব্যঞ্জন দুটির মধ্যে ব্যবধান তৈরি করে ।
উচ্চারণের
সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনকে ভেঙে এর মধ্যে স্বরধ্বনি আনয়ন করাকে বলা হয়
স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ। যেমন: জন্ম> জনম, রত্ন> রতন, স্বপ্ন > স্বপন, প্রীতি >˃ পিরীতি
(শব্দের মাঝে ই-কার এসেছে)। মুক্তা >˃ মুকুতা
(শব্দের মাঝে উ-কার এসেছে)। অনুরূপভাবে বর্ষণ>˃বরিষণ, শ্রী>˃ছিরি, গর্ব>˃গরব, ভক্তি˃>ভকতি, ধর্ম>˃ধরম ইত্যাদি।
খ)
ব্যঞ্জনাগম :
শব্দের
মধ্যে অনেক সময় বাইরে থেকে একটি ব্যঞ্জন ধ্বনি এসে জায়গা করে নেয়।একে ব্যঞ্জনাগম
বলে।স্বরাগমের মতোই ব্যঞ্জনাগম তিন রীতিতে হয়। ক) আদি-ব্যঞ্জনাগম খ) মধ্য-ব্যঞ্জনাগম গ)
অন্ত্য-ব্যঞ্জনাগম।
ক)
আদি-ব্যঞ্জনাগম : ওঝা > রোজা , আম> রাম ,উপকথা>রূপকথা ইত্যাদি
।
খ)
মধ্য-ব্যঞ্জনাগম : শৃগাল > শিয়াল , অম্ল > অম্বল, বানর> বান্দর
ইত্যাদি ।
গ)
অন্ত্য-ব্যঞ্জনাগম : জমি > জমিন, খোকা > খোকন, ধনু>ধনুক ইত্যাদি ।
শ্রুতিধ্বনিঃ
দুটি
স্বরধ্বনি পাশাপাশি থাকলে দ্রুত উচ্চারণের সময় এরই মধ্যে একটি নতুন ব্যঞ্জনধ্বনি
উচ্চারিত হয়। এরূপ রীতিকে শ্রুতিধ্বনি বলে। যে ধ্বনির আগমন ঘটে সেই ধ্বনির নাম অনুসারে
শ্রুতি ধ্বনি হয়। যেমন:
ধ্বনির রূপান্তর :
ধ্বনির
আগম ও লোপ ছাড়া ধ্বনি পরিবর্তনের তৃতীয় এবং অন্যতম কারণ ধ্বনির রূপান্তর। শব্দের
মধ্যে ধ্বনির রূপের বদলকে ধ্বনির রূপান্তর বলা হয় ।
ক) স্বরসঙ্গতিঃ
সংগতি
শব্দের অর্থ সাম্যভাব।স্বরসঙ্গতি হলো অসম স্বরধ্বনির সাম্য বা সংগতি লাভ। একটি
স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দের অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন:
শিয়াল>˃শেয়াল, ইচ্ছা˃>ইচ্ছে, ধুলা>˃ধুলো
ইত্যাদি। স্বরসঙ্গতি চার প্রকার।যেমন:
প্রগতঃ আদিস্বর
অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তিত হলে প্রগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: শিকা>˃শিকে, মুলা>˃মুলো, পূজা > পুজো , নৌকা> নৌকো, কুমড়া> কুমড়ো
ইত্যাদি।
পরাগতঃ
অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: দেশি>˃দিশি, বিড়াল> বেড়াল, শিয়াল> শেয়াল, শুনা> শোনা ইত্যাদি
।
মধ্যগতঃ আদ্যস্বর ও
অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: বিলাতি>˃বিলিতি , ভিখারি > ভিখিরি, জিলাপি> জিলিপি
ইত্যাদি ।
অন্যান্যঃ আদ্যস্বর ও
অন্ত্যস্বর এই দু’স্বরই পরস্পর প্রভাবিত হলে অন্যান্য
স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন: মোজা>˃মুজো , ধোঁকা> ধুঁকো
ইত্যাদি ।
খ
) অপিনিহিতি
অপি
শব্দের অর্থ পূর্বে এবং নিহিতি শব্দের অর্থ স্থাপন।অপিনিহিতি শব্দের অর্থ পূর্বে
স্থাপন।ধ্বনি পরিবর্তনের এই পারিভাষিক নাম দিয়েছেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। শব্দস্থিত ব্যঞ্জনবর্ণের পরবর্তী ই-কার বা
উ-কার যথাস্থানে উচ্চারিত না হয়ে ব্যঞ্জনবর্ণের পূর্বে উচ্চারিত হওয়ার রীতিকে
অপিনিহিতি বলে।
রাখিয়া > রাইখ্যা ( র্ +আ +খ্ +ই+ য়্ +আ > র্+ আ +ই+ খ্
+য্ +আ)
যেমন
: আজি>আইজ, সাধু>সাউধ, রাখিয়া>রাইখ্যা,
অপিনিহিতি
বঙ্গালি উপভাষার বৈশিষ্ট্য।
অভিশ্রুতিঃ- অপিনিহিতির পরবর্তী স্তর অভিশ্রুতি । অপিনিহিতি প্রভাবজাত ই বা উ শব্দ মধ্যস্থিত
স্বরধ্বনিকে প্রভাবিত করে যে আভ্যন্তরীণ সন্ধি ঘটায় তাকে অভিশ্রুতি বলে ।অভিশ্রুতি
রাঢ়ি উপভাষার বৈশিষ্ট্য।
রাখিয়া > রাইখ্যা
(অপিনিহিতি)>
রেখে
র্+আ+ ই +খ্+
য্+ আ
> র্+
এ +খ্ +এ (আ+ই=এ)
যেমন:
রাখিয়া>˃রাইখ্যা>˃রেখে, বাদিয়া>˃বাইদ্যা>˃বেদে, মাছুয়া˃>মাউছুয়া>˃মেছো, মাটিয়া> মাইট্যা> মেটে
ইত্যাদি।
ঘ)
ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীকরণ বা সমীভবন
শব্দমধ্যস্থ
দুটি অসম ব্যঞ্জনধ্বনি সমব্যঞ্জনে পরিণত হলে তাকে সমীভবন বা ব্যঞ্জনসংগতি বলে। যেমন : জন্ম>জম্ম, গল্প> গপ্প, ইত্যাদি ।
সমীভবন
তিন প্রকার-
প্রগত সমীভবন : পূর্ববর্তী
ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জনধ্বনি পরিবর্তন ঘটে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির মতো হলে তাকে প্রগত সমীভবন বলে। যেমন : চক্র>চক্ক, পক্ব >পক্ক, পদ্ম>পদ্দ, ইত্যাদি। ( XY>XX )
পরাগত সমীভবন পরবর্তী
ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তন হলে তাকে পরাগত সমীভবন
বলে। যেমন : গল্প > গপ্প, সর্প > সপ্প , তৎ+জন্য>তজ্জন্য, ধর্ম > ধম্ম
ইত্যাদি।
( XY>YY)
অন্যোন্য সমীভবন : যখন পরস্পরের প্রভাবে
দুটো ব্যঞ্জনধ্বনিই পরিবর্তিত হয় তখন তাকে বলে অন্যোন্য সমীভবন। যেমন : বৎসর > বছর , মহোৎসব > মোচ্ছব
ইত্যাদি।
(XY>ZZ)
ঙ)
বিষমীভবন বা অসমীকরণঃ
শব্দ
মধ্যস্থিত দুটি সমধ্বনির একটির পরিবর্তন ঘটলে তাকে বিষমীভবন বা অসমীকরণ বলে। যেমন:
শরীর>˃শরীল, লাল>˃নাল, ললাট>˃নলাট
ইত্যাদি।
চ)
নাসিক্যীভবনঃ
নাসিক্যব্যঞ্জন( ঙ, ঞ, ণ, ন, ম) লোপ
পাওয়ার ফলে পূর্ব
স্বরধ্বনিটি অনুনাসিক হলে তাকে
নাসিক্যীভবন বলে। যেমন: চন্দ্র > চাঁদ, শঙ্খ > শাঁখ, পঞ্চ > পাঁচ , অঙ্ক > আঁক ইত্যাদি
।
ছ)
স্বতোনাসিক্যীভবনঃ শব্দস্থিত নাসিক্য
ব্যঞ্জন লোপ না পেয়েও যদি সানুনাসিক স্বর হয় তবে তাকে স্বতোনাসিক্যীভবন বলে।যেমনঃ
পুস্তক>
পুথি> পুঁথি, হাসপাতাল> হাঁসপাতাল।
বর্ণ বিকৃতিঃ
উচ্চারণকালে শব্দস্থিত স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণ নতুন রূপ লাভ করলে তাকে বর্ণ
বিকৃতি বলে। যেমন: কপাট>˃কবাট, ধোপা˃>ধোবা, কাক>˃কাগ ইত্যাদি।
ক্ষীণায়নঃ
শব্দ মধ্যস্থিত মহাপ্রাণ ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে পরিণত হলে তাকে ক্ষীণায়ন বলে।
যেমন: পাঁঠা˃>পাঁটা, কাঠ˃>কাট ইত্যাদি। (অল্পপ্রাণীভবন)
পীনায়নঃ শব্দ মধ্যস্থিত কোন অল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ ধ্বনিরূপে
উচ্চারিত হওয়ার রীতিকে পীনায়ন বলে। যেমন: কাঁটাল>˃কাঁঠাল, পুকুর˃>পুখুর ইত্যাদি। (মহাপ্রাণীভবন)
ঘোষীভবন : অঘোষ বর্ণ সঘোষ বর্ণের প্রভাবে সঘোষ বর্ণে পরিণত হলে তাকে
ঘোষীভবন বলে।
যেমন- চাকদহ>
চাগদা
স্বতোঘোষীভবন : অঘোষ বর্ণ কোনো সঘোষ বর্ণের প্রভাব ছাড়াই ঘোষ বর্ণে পরিণত হলে তাকে স্বতোঘোষীভবন বলে ।
যেমনঃ কাক> কাগ, ছাত>
ছাদ, শাক> শাগ
অঘোষীভবন : ঘোষ বর্ণ অঘোষ বর্ণে পরিণত হলে তাকে অঘোষীভবন বলে।যেমনঃ
বড়ঠাকুর> বটঠাকুর, বাবু>
বাপু, বীজ> বিচি ইত্যাদি ।
ধ্বনির স্থানান্তর :- শব্দমধ্যস্থ একাধিক স্বরধ্বনি বা
ব্যঞ্জনধ্বনি বিভিন্নভাবে স্থান পরিবর্তন করে যখন তখন তাকে বলা হয় ধ্বনির
স্থানান্তর । যথা—
(ক) অপিনিহিতি (খ) ধ্বনি বিপর্যয় বা বিপর্যাস ও(গ) দূরস্থ ধ্বনির বিপর্যাস বা স্পুনারিজম
(ক) অপিনিহিতি —শব্দ মধ্যস্থ ব্যঞ্জনধ্বনির পর যদি ই-কার বা উ-কার থাকে, তবে সেই ই-কার বা উ-কার ঐ
ব্যঞ্জনধ্বনির আগে উচ্চারিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অপিনিহিতি বলে । যেমন —আজি > আইজ, কালি > কাইল, সাধু > সাউধ, আশু > আউস প্রভৃতি (আ + জ + ই > আ + ই + জ ) । এছাড়া য-ফলা যুক্ত
শব্দ বা 'ক্ষ', 'জ্ঞ' থাকলেও ই-কার আগে উচ্চারিত হয় ।
বাক্য > বাইক্য, লক্ষ্ > লইক্ষ কন্যা > কিইন্যা প্রভৃতি । অপিনিহিতি বাংলার
বঙালী উপভাষায় প্রচলিত বৈশিষ্ট্য । এই বঙালী উপভাষা বাংলাদেশে প্রচলিত হয় বেশি ।
(খ) ধ্বনি বিপর্যয় বা বিপর্যাস —উচ্চারণের সময় অসাবধানতাবশত বা অক্ষমতার কারণে শব্দ মধ্যস্থ
সংযুক্ত বা পাশাপাশি দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির স্থান পরিবর্তন করার ঘটনাকে ধ্বনি বিপর্যয়
বলে । যেমন বাক্স > বাস্ক, পিশাচ > পিচাস, বাতাসা > বাসাতা, তলোয়ার > তরোয়াল, দহ > হ্রদ, রিকশা > রিশকা প্রভৃতি ।
(গ) স্পুনারিজমঃ পরস্পর থেকে
দূরে অবস্থিত ধ্বনির মধ্যে স্থান বিনিময় ঘটলে তাকে দূরস্থ ধ্বনির বিপর্যাস বলে।
অক্সফোর্ড
ইউনিভারসিটির ডঃ স্পুনারের উচ্চারণে এই ধরণের প্রবণতা লক্ষ্য করা যেতো বলে একে স্পুনারিজম
ও বলে। যেমন- এক কাপ চা> এক চাপ কা , গলে জল হয়ে গেল> জলে গল হয়ে গেল।
মহাপ্রাণীভবন-কোন মহাপ্রাণ ধ্বনির প্রভাবে
যদি অল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ উচ্চারিত হয় তাহলে তাকে মহাপ্রাণ ভবন বলে। প্রতিটি
বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ এবং হ মহাপ্রাণ বর্ণ।
যেমন -স্তম্ভ>থাম (ভ
এর প্রভাবে ত' 'থ' হয়েছে)
পাঁচ হালা>পাঁছালা(
হ এর প্রভাবে চ ছ হয়েছে)
স্বতোমহাপ্রাণীভবন- কোন মহাপ্রাণ ধ্বনির প্রভাব
ছাড়াই যদি অল্পপ্রাণ ধ্বনি মহাপ্রাণ উচ্চারিত হয় তাহলে তাকে স্বতোমহাপ্রাণীভবন বলে। যেমন পুস্তক> পুথি
(ত কোন মহাপ্রাণ ধ্বনির প্রভাব ছাড়াই থ হয়েছে)
পতঙ্গ >ফড়িং(প
কোন মহাপ্রাণ ধ্বনির প্রভাব ছাড়াই ফ হয়েছে)
অল্পপ্রাণীভবন- কোন মহাপ্রাণ ধ্বনি যদি
অল্পপ্রাণ উচ্চারিত হয় তাহলে তাকে অল্পপ্রাণী ভবন বলে। যেমন বাঘ>বাগ, দুধ> দুদ
মূর্ধন্যীভবন- কোন মূর্ধন্য ধ্বনির (ল,র,ষ,ট,ঠ,ড,ঢ,ণ,ড়,ঢ়) ওভাবে সংশ্লিষ্ট বা কাছাকাছি অবস্থিত কোন দন্ত্য ধ্বনি (ত,র,দ,ধ,না)যদি মূর্ধন্য ধ্বনি
তে পরিণত হয় তবে তাকে মূর্ধন্যীভবন বলে।
যেমন - বিকৃত>বিকট ('ঋ' এর প্রভাবে 'ত' 'ট' হয়েছে)
বৃদ্ধ> বুড়া, উৎ+ডীন=উড্ডীন
স্বতোমূর্ধন্যীভবন -মূর্ধন্য ধ্বনির প্রভাব
ছাড়াই যদি কোন দন্ত্য ধ্বনি মূর্ধন্য ধ্বনি পরিবর্তন হয় তবে সেই পরিবর্তন
স্বতোমূর্ধন্যীভবন বলে।
যেমন পততি>পড়ে
বিমূর্ধন্যীভবন -যদি কোন মূর্ধন্য ধ্বনি
মূর্ধন্য না থেকে দন্ত্য ধ্বনি বা অন্য কোন প্রকার ধ্বনিতে পরিণত হয় তবে সেই
প্রক্রিয়া কে বিমূর্ধন্যীভবন বলে। যেমন - প্রাণ> বাংলা
উচ্চারণে প্রান
বিষ>বাংলা উচ্চারণে বিশ।
তালব্যীভবন- তালব্য ধ্বনির প্রভাবে কোন
দন্ত্য ধ্বনি বা অন্য কোন ধ্বনি যদি তালব্য ধ্বনি তে পরিবর্তিত হয়ে যায় তবে সেই
প্রক্রিয়াকে তালব্যীভবন বলে। (ই,ঈ,ত,এ,জ,ও,ঞ,শ,য় তালব্য ধ্বনি)
যেমন সন্ধ্যা >সঞঝা>সাঁঝ (এখানে য-ফলার প্রভাবে 'ন' এবং 'ধ ' যথাক্রমে 'ঞ' এবং 'ঝ' পরিণত হয়েছে)।
উষ্মীভবন - কোন ধ্বনি উচ্চারণে শ্বাসবায়ু
পূর্ণ বাধা পেলে স্পর্শধ্বনি এবং আংশিক বাধা পেলে উষ্মধ্বনি হয়।স্পর্শ ধ্বনি
উচ্চারণ করতে গিয়ে যদি শ্বাসবায়ু আংশিক বাধা পায় তবে স্পর্শধ্বনি উষ্ম ধ্বনি তে
পরিবর্তন হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে উষ্মীভবন বলে।
যেমন কালীপূজা >চট্টগ্রামের
উচ্চারনে খালী ফুজা
যেমন গাছতলা >গাসতলা
, খেয়েছে >খাইসে
সংকোচন -উচ্চারণের দ্রুত তার জন্য অনেক
সময় আমরা কোন শব্দের সবকটি ধ্বনি পূর্ণরূপে স্পষ্টরূপে উচ্চারণ না করে সংক্ষিপ্ত
উচ্চারণ করি। একে সংকোচন বলে।
যেমন - পরিষদ >পর্ষদ , পেঁয়াজ >প্যাজ ,যা ইচ্ছা তাই> যাচ্ছেতাই
বিস্ফোরণ -শব্দের দীর্ঘ উচ্চারণের জন্য
কোন শব্দের ধ্বনি কে বাড়িয়ে উচ্চারণ করলে তাকে বিস্ফোরণ বা প্রসারণ বলে। যখন
পর্তুগিজ পেরা> বাংলা পেয়ারা
মনো বিষয়ক ধ্বনি পরিবর্তন:-
সাদৃশ্য- কোন দুটি সদৃশ্য শব্দের কোন
একটিতে যদি কোন ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটে তবে অপর শব্দটিতে ঐ রূপ পরিবর্তন
প্রত্যাশিত, এই বোধ থেকেই সাদৃশ্যের জন্ম। যখন আমরা কোন শব্দের সঙ্গে মিলিয়ে
অনুরূপ কোন নতুন শব্দ গড়ে নি ই তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলে সাদৃশ্য।
যেমন - টাকার কুমির (কুবেরের সাদৃশ্য)
বধুটিকা>বুড়ি , এর সাদৃশ্য ঝিউড়ি ,শাশুড়ি।
বিমিশ্রণ/মিশ্রণ :- কোন
একটি শব্দ ব্যবহার কালে ধ্বনি সারূপ্যের ফলে অপর শব্দ সেই রূপ লাভ করলে বিমিশ্রণ হয়।
রস শব্দের সাদৃশ্যে অপরিচিত পর্তুগিজ শব্দ অনানস হলো আনারস।
পিপাসা>পিয়াসা, তৃষ্ণা>তিয়াষ।
সংকর শব্দ:- বিভিন্ন ভাষার উপাদান যোগ করে
একটি নতুন শব্দ গঠিত হলে তাকে সংকর শব্দ বা মিশ্র শব্দ বলে। যেমন ইংরেজি শব্দ
মাস্টার + বাংলা প্রত্যয় ই = মাস্টারি,
পর্তুগিজ পাও +হিন্দি রোটি = পাউরুটি
লোকনিরুক্তি: কোনো
শক্ত-শব্দ বা অপরিচিত শব্দ যখন লোক-সাধারণের উচ্চারণে অল্পবিস্তর ধ্বনি-সাম্যের
সুযোগ পেয়ে পরিচিত শব্দের সাদৃশ্য লাভ করে, তখন
তাকে লোকনিরুক্তি বলে।
যেমন: "হাঁসপাতাল" । এটি এসেছে ইংরেজি Hospital শব্দ থেকে।যার প্রাচীন উচ্চারণ
ছিল "হাসপিটাল"।সাধারণ লোক "হাসপিটাল" উচ্চারণ করতে
পারতোনা।তারা "হাসপিটালে"-র প্রথম অংশ 'হাস' এর সাদৃশ্য পেলো 'হাসে'-র সাথে;আর 'পিটালে'-র
সাদৃশ্য পেলো 'পাতালে'-র
সাথে।তখন তারা "হাস-পিটাল" কে উচ্চারণ করল "হাঁসপাতাল"।
এই হাসপিটাল বা হসপিটালকে হাঁসপাতাল রূপে উচ্চারণ-ই হল লোক
নিরুক্তি। এছাড়াও---
২)লজেন্স(Lozenges)থেকে
ল্যাবেনচুশ।
৩)আর্মচেয়ার(armchair) থেকে
আরামচেয়ার।
৪)হিন্দি "শোভন পাপড়ি" থেকে শনপাপড়ি।
৫)সংস্কৃত "ভ্রমার্থী" থেকে ভিমরথী ইত্যাদি।
জোড়কলমশব্দ
'হাঁস ছিল সজারু, (ব্যাকরণ
মানি না )
হয়ে গেল 'হাঁসজারু' কেমনে তা জানি না ।
বক কহে কচ্ছপে---বাহবা কি ফুর্তি ।
অতি খাসা আমাদের 'বকচ্ছপ' মূর্তি ।।
কবি সুকুমার রায় জোড়কলম নিয়ে প্রচুর শব্দ সৃষ্টি করেছেন ।
উল্লিখিত 'হাঁসজারু', 'বকচ্ছপ' দুটি জোড়কলম শব্দ
একটি শব্দের সঙ্গে বা তার অংশ বিশেষের সঙ্গে, যদি অন্য অকটি শব্দ বা তার অংশ বিশেষ যুক্ত হয়ে নতুন একটি শব্দ তৈরী হয়, তবে তাকে জোড়কলম শব্দ বলে ।
উদাহরণ :
'ধোঁয়াশা' = ধোঁয়া
+ কুয়াশা ।
ধোয়াঁ ( পুরো শব্দ ) + কুয়াশা'র
অংশবিশেষ 'শা' যোগে সৃষ্ট ।
'ঘোগের গাড়ি'--- কৃষ্ণনগরে
'ঘোগের গাড়ি' খুব
প্রসিদ্ধ । এর মানে হলো ঘোড়ায় টানা গোরুর গাড়ি ।
#বৈশিষ্ট্য :
1. জোড়কলম হল ধ্বনিপরিবর্তনের একটি বিশেষ ফসল ।
2.দুটি শব্দ জোড়া লাগছে বলেই জোড়কলম ।
3. আপনাআপনি সৃষ্টি হয়না । অত্যন্ত সচেতন ভাবেই সৃষ্টি হয় ।
বিষম চ্ছেদ/ভ্রান্তি বিশ্লেষ/নিষ্কালন
শব্দের বিশ্লেষণ যেভাবে হওয়া উচিত অনেক সময় ভাবে না হয়ে বিকৃত
রূপে হয়ে থাকে যার ফলে নতুন শব্দের উদ্ভব করতে পারে -এইরূপ বিকৃত বিশ্লেষণকে
বিষমচ্ছেদ বলা হয়।
অসুর শব্দের প্রকৃত বিশ্লেষণ ছিল অস্+উর।
পরবর্তীকালে 'অসুর' শব্দের বিশ্লেষণ হলো
' ন সুর 'অর্থাৎ
যে সুর নয়। দেবতা অর্থে নতুন শব্দ সৃষ্টি হলো সুর।
বিধবা শব্দটি একটি মৌলিক শব্দ, এর
বিশ্লেষণ হয় না। পরবর্তীকালে বি কে উপসর্গ ধরে বিশ্লেষণ হলো বিগত হয়েছে ধব যার।
স্বামী বাচক ধব নামক নতুন শব্দের সৃষ্টি হল।
ভুয়া শব্দ- বাংলা শব্দ ভান্ডারে এমন কিছু
শব্দ আছে যাদের মূল নেই অথচ তাকেই মূল শব্দ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই ধরনের
শব্দকে ভুয়া শব্দ বলে।
যেমন প্রোথিত শব্দটি বাংলাতে বহুল প্রচলিত, কিন্তু
প্রথ বা প্রোথ বলে সংস্কৃতে কোন ধাতু নেই।
প্রতিমা নিরঞ্জন শব্দটি ব্যাপক প্রচলিত অথচ নিরঞ্জন শব্দটি কোন মূল
নেই।
বিমুখ ধ্বনি পরিবর্তন:- এক শব্দ যদি ধ্বনি
পরিবর্তন বশত একাধিক রূপ গ্রহণ করে তবে সেই প্রক্রিয়াকে বলা চলে বিমুখ ধ্বনি
পরিবর্তন।
যেমন সংস্কৃত মহিষ > মোষ, ভৈস, চক্র>চরকা,চাকা।
সমমুখ ধ্বনি পরিবর্তন:-
ধ্বনি পরিবর্তনের ফলে যদি একাধিক শব্দ পরিবর্তিত হয়ে উচ্চারণ ও
বানানে সম্পূর্ণ একই রকম রূপ লাভ করে তবে সেই ধরনের পরিবর্তনকে সম মুখখ ধ্বনি
পরিবর্তন বলে।
যেমন পততি>পড়ে
পঠতি>পড়ে উভয় ক্ষেত্রেই
পড়ে হয়েছে।