ধ্বনি ও বর্ণ
ধ্বনি : কোন ভাষার উচ্চারণের ক্ষুদ্রতম এককই হলো ধ্বনি। ভাষাকে বা ভাষার বাক প্রবাহকে বিশ্লেষণ করলে কতগুলো ক্ষুদ্রতম একক বা মৌলিক ধ্বনি পাওয়া যায়। বাগযন্ত্রের স্বল্পতম প্রয়াসে উচ্চারিত শব্দের অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশকে ধ্বনি বলে । যেমন- অ, আ, ক্, খ্, ইত্যাদি।
ধ্বনি মূলত ২ প্রকার- স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি।
স্বরধ্বনি : ধ্বনি উচ্চারণের সময় মানুষ ফুসফুস থেকে কিছু বাতাস ছেড়ে
দেয়। এবং সেই বাতাস ফুসফুস কণ্ঠনালী দিয়ে এসে মুখ দিয়ে বের হওয়ার পথে বিভিন্ন
জায়গায় ধাক্কা খেয়ে বা বাঁক খেয়ে একেক ধ্বনি উচ্চারণ করে। যে ধ্বনিগুলো উচ্চারণের
সময় এই বাতাস কোথাও বাধা পায় না, বা ধাক্কা খায় না, তাদেরকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন, অ, আ,
ই, ঈ, উ,
ঊ, ইত্যাদি। এগুলো
উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে মুখের বাহিরে আসতে কোথাও ধাক্কা খায় না।
ব্যঞ্জনধ্বনি : যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস
থেকে বাতাস মুখের বাহিরে আসার পথে কোথাও না কোথাও ধাক্কা খায়, বা বাধা পায়, তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
যেমন- ক্,
খ্, গ্, ঘ্,
ইত্যাদি। এই ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় বাতাস জিহবামূল বা
কন্ঠে ধাক্কা খায়। তাই এগুলো ব্যঞ্জনধ্বনি।
বর্ণ : বিভিন্ন ধ্বনিকে লেখার সময় বা নির্দেশ করার সময় যে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে বর্ণ বলে।
বাংলা ভাষায় মোট ৫০ টি বর্ণ আছে । স্বরবর্ণের সংখ্যা এগারোটি , ‘৯’ এর ব্যবহার
বাংলায় নেই । বাংলা বর্ণমালায় ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ৩৯ টি ।
প্রকৃত ব্যঞ্জন ৩৫ টি এবং অপ্রকৃত ব্যঞ্জন ৪ টি ( ড় , ঢ়, য়, ৎ ) । বাংলা উচ্চারণে
স্বরধনি সাতটি ও ব্যঞটজন্ধ্বনি ২৯ টি । বাংলায় মোট ধ্বনির সংখ্যা ছত্রিশটি ।
ধ্বনি ও বর্ণের পার্থক্য
–
1.
ধ্বনি হল শব্দ বা আওয়াজ , বর্ণ হল তার লিখিত রূপ
।
2.
ধ্বনি শ্রুতিগ্রাহ্য কিন্তু বর্ণ দৃষ্টিগ্রাহ্য
।
3.
ধ্বনি হল শব্দের সাহায্যে সৃষ্ট একপ্রকার সংকেত
; কিন্তু বর্ণ চিত্র সংকেত ।
4.
ধ্বনি ক্ষণস্থায়ী , বর্ণ দীর্ঘস্থায়ী ।
5.
ধ্বনির ভাবপ্রকাশ ক্ষমতা বেশি কিন্তু বর্ণের ভাব
প্রকাশ ক্ষমতা কম ।
6.
ধ্বনি ভাষার প্রাথমিক উপাদান , বর্ণ ভাষার বিকল্প
উপাদান ।
স্বরবর্ণ : স্বরধ্বনির লিখিত রূপকে স্বরবর্ণ
বলে । স্বরবর্ণ স্বরধ্বনির সাংকেতিক চিহ্ন
।
ব্যঞ্জনবর্ণ : ব্যঞ্জনধ্বনির লিখিত রূপকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে । ব্যঞ্জন
ধ্বনির সাংকেতিক চিহ্ন ।
উচ্চারণ-সময়ের তারতম্য অনুসারে স্বরবর্ণ গুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়-
১) হ্রস্বস্বর - যে স্বর উচ্চারণ করতে কম সময় লাগে তাকে হ্রস্বস্বর
বলে।
উদাহরণ - অ,ই,উ,ঋ
২) দীর্ঘস্বর - যে স্বর উচ্চারণ করতে বেশি সময় লাগে তাকে দীর্ঘস্বর বলে।
উদাহরণ - আ,ঈ,ঊ,এ,ঐ,ও,ঔ
৩) প্লুতস্বর - দূর থেকে ডাকার সময়,গানের সময়,বা কান্নার সময় স্বরধ্বনি কে টেনে উচ্চারণ করলে তাকে প্লুতস্বর বলে।
যেমন-“যদু হে-এ-এ-এ মাছ কিবা ?”
গঠণগত দিক থেকে স্বরধ্বনি দুই প্রকার-
১) মৌলিক স্বরধ্বনি- যে স্বরধ্বনিকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাকে মৌলিক
স্বরধ্বনি বলে। অ , আ , ই , উ, এ,
ও , অ্যা
২) যৌগিক স্বরধ্বনি- যে স্বরধ্বনি কে বিশ্লেষণ করা যায় তাকে যৌগিক
স্বরধ্বনি বলে। ঐ (ও+ই) ,ঔ (ও+উ)
বাংলা বর্ণমালা : বাংলা বর্ণমালায় বর্ণ আছে মোট ৫০টি।
স্বরধ্বনির উচ্চারণের সময় বাতাস ফুসফুস থেকে বের হয়ে কোথাও বাধা পায় না। মূলত
জিহবার অবস্থান ও ঠোঁটের বিভিন্ন অবস্থার পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন স্বরধ্বনি
উচ্চারিত হয়। নিচে স্বরধ্বনির উচ্চারণ একটি ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো-
|
সম্মুখস্থ স্বরধনি |
কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি |
পশ্চাদভাগস্থ স্বরধ্বনি |
|
||
সংবৃত |
প্রসারিত |
ই |
|
উ |
কুঞ্চিত |
উচ্চ |
অর্ধ সংবৃত |
এ |
|
ও |
উচ্চ-মধ্য |
||
অর্ধ বিবৃত |
অ্যা |
|
অ |
নিম্ন-মধ্য |
||
বিবৃত |
|
আ |
|
নিম্ন |
মৌলিক স্বরধ্বনির জিহ্বার অবস্থান ও ওষ্ঠের আয়তন অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগঃ-
জিহ্বার অবস্থান অনুযায়ী -
১) সম্মুখ স্বরধ্বনি : যে ধনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা
সামনের দিকে এগিয়ে যায় তাকে সম্মুখ স্বরধনি বলে । এই জাতীয় মৌলিক স্বরবর্ণগুলো হলো- ই, এ এবং অ্যা ।
২) পশ্চাৎস্বরধ্বনি : যে ধনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা
পিছিনের দিকে পিছিয়ে যায় তাকে পশ্চাদ স্বরধনি বলে
। এই জাতীয় মৌলিক স্বরবর্ণগুলো হলো- উ, ও এবং অ।
৩) কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি: এক্ষেত্রে জিহ্বার পুরো অংশটুকু
নিম্নচোয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে শায়িত থাকবে। যেমন –আ
জিহ্বার অবস্থান অনুযায়ী দ্বিতীয় প্রকার নামকরণঃ-
১) উচ্চ স্বরধ্বনিঃ- যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে জিহ্বা উচ্চস্থানে
অবস্থান করে তাদের উচ্চস্বরধ্বনি বলে। যেমন- ই,উ
২) উচ্চমধ্য স্বরধ্বনিঃ- যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে জিহ্বা
কিচ্ছুটা উচ্চস্থানে অবস্থান করে তাদের
উচ্চমধ্যস্বরধ্বনি বলে। যেমন- এ,ও
৩) নিম্নমধ্যস্বরধ্বনিঃ-যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে জিহ্বা কিছুটা
নিম্নস্থানে অবস্থান করে তাদের নিম্নমধ্যস্বরধ্বনি বলে। যেমন - অ্যা,অ
৪) নিম্নস্বরধ্বনিঃ- যে স্বরধ্বনি উচ্চারণকালে জিহ্বা নিম্নস্থানে
অবস্থান করে তাদের নিম্নমধ্যস্বরধ্বনি বলে। যেমন- আ
মুখবিবরের অবস্থান অনুযায়ী নামকরণঃ-
জিহ্বা তালুর দিকে উঠালে, তালু ও জিহ্বার
মধ্যবর্তীস্থানের পথ সঙ্কীর্ণ হয়ে উঠে। এই সঙ্কীর্ণ স্থানের পরিমাণের উপর ভিত্তি
করে- মৌলিক স্বরবর্ণগুলোকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ চারটি হলো - সংবৃত, বিবৃত, অর্ধ-সংবৃত ও
অর্ধ-বিবৃত।
১। সংবৃত (Close) : জিহ্বা তালুর কাছাকাছি এনে বায়ু চলাচলের জন্য একটি সঙ্কীর্ণ পথ তৈরি করা হয়।
এই অবস্থায় উচ্চারিত ধ্বনিগুলোকে সংবৃত বলা হয়। তালু সংলগ্ন ধ্বনি হিসাবে এদেরকে
তালব্য বর্ণ বলা হয়। এক্ষেত্রে ঠোঁট প্রসারিত
থাকে।
যেমন - ই,উ
২। বিবৃত (Open) : এই জাতীয় ধ্বনি উচ্চারণে জিহ্বা ও তালুর ভিতর সব চেয়ে বেশি ফাঁকা জায়গার
সৃষ্টি হয়। মুখ প্রসারিত করে এই ফাঁকা জায়গার পরিমাণকে আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যেমন
- আ
৩। অর্ধ-সংবৃত (half Close) : এই শ্রেণীর স্বরধ্বনি উচ্চারণের ক্ষেত্রে জিহ্বা মধ্যরেখাকে অতিক্রম করে সংবৃত
অংশের কিছুটা অধিকার করবে। বাংলাতে এই শ্রেণীর দুটি ধ্বনি পাওয়া যায়। এই ধ্বনি
দুটো হলো । এ এবং ও।
৪। অর্ধ-বিবৃত (half Open) : এই শ্রেণীর স্বরধ্বনি উচ্চারণের ক্ষেত্রে জিহ্বা মধ্যরেখাকে অতিক্রম না করে
বিবৃত অংশের কিছুটা অধিকার করবে। বাংলাতে এই শ্রেণীর দুটি ধ্বনি পাওয়া যায়। এই
ধ্বনি দুটো হলো- অ্যা এবং অ।
ওষ্ঠের আয়তন অনুযায়ী নামকরণঃ-
ক. স্বাভাবিক প্রসারিত বা প্রসৃত বা অগোলকৃত (Spread/Unrounded)
:
ঠোঁট দুটিকে একটু উন্মুক্ত করে এই জাতীয় ধ্বনি উচ্চারণ করা
হয়। এক্ষেত্রে স্বভাবিকভাবে ঠোঁট যেভাবে থাকে তার চেয়ে বেশি করে দুই দিকে
প্রসারিত করা হয় না। প্রসারণ যা ঘটে তা হলো ঠোঁটের উপর-নিচ বরাবর।
যেমন - ই, এ,
আ, অ্যা
খ। বর্তুলাকার বা কুঞ্চিত(Rounded) : এক্ষেত্রে ঠোঁট দুটিকে একটু উন্মুক্ত করে এই জাতীয় ধ্বনি উচ্চারণ করা হয়।
বাংলাতে এই জাতীয় ধ্বনিগুলো হলো- অ, ও এবং উ।
যৌগিক স্বরধ্বনি : পাশাপাশি দুটি স্বরধ্বনি থাকলে
তারা উচ্চারণের সময় সাধারণত একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হয়ে থাকে। পাশাপাশি দুটি
স্বরধ্বনি একটি স্বরধ্বনি রূপে উচ্চারিত হলে মিলিত স্বরধ্বনিটিকে বলা হয় যৌগিক
স্বর,
সন্ধিস্বর, সান্ধ্যক্ষর বা
দ্বি-স্বর। যৌগিক স্বরের প্রথম স্বরটি পূর্ণ উচ্চারিত হয় , কিন্তু দ্বিতীয়
স্বরটি অর্ধ উচ্চারিত হয় ।
যৌগিক স্বর জ্ঞাপক বর্ণ মাত্র ২ টি- ঐ, ঔ। এছাড়াও আরও অনেকগুলি যৌগিক স্বর ভাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয় ।অন্য যৌগিক স্বরধ্বনিগুলোর নিজস্ব প্রতীক বা বর্ণ নেই।
সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে দ্বিস্বর ২৫ টি ।
পবিত্র সরকারের মতে দ্বিস্বর ১৮ টি ।
আব্দুল হাই এর মতে দ্বিস্বর ২৯ টি ।
অর্ধস্বর – যে স্বরধনিগুলির অক্ষর গঠনের ক্ষমতা নেই
, বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অক্ষরের শেষে বসে তাদের অর্ধস্বর বলে । অর্ধস্বর সম্পূর্ণ
উচ্চারিত হয় না । পূর্ণস্বরের শেষে অর্ধ উচ্চারিত হয় । বাংলায় অর্ধস্বরের সংখ্যা চারটি
- ই , উ, এ , ও ।
যেমন – ভাই , খাও , ঢেউ , ইত্যাদি ।
নিহিত স্বর – ব্যঞ্জনবর্ণ
স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না । স্বরবর্ণগুলির সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যঞ্জনের
সঙ্গে যুক্ত হয় । অনেকগুলি স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ দেখা গেলেও ‘অ’ ব্যঞ্জনের
সঙ্গে মিশে থাকে । অ – কে দেখা যায় না । ‘অ’
এর সংক্ষিপ্ত রূপ নেই । তাই ‘অ’কে নিহিত স্বর বা নিলীন স্বর বলে ।
প্রতিটি স্বরধনির বৈশিষ্ট্য |
|
অ |
নিন্মমধ্য , পশ্চাদ, বর্তুল, অর্ধবিবৃত |
আ |
নিম্ন , কেন্দ্রীয়, প্রসৃত, বিবৃত |
অ্যা |
সম্মুখ, নিম্নমধ্য , প্রসৃত, অর্ধবিবৃত |
ই |
সম্মুখ , সংবৃত, উচ্চ, প্রসৃত |
উ |
পশ্চাদ,উচ্চ, সংবৃত,বর্তুল |
এ |
সম্মুখ , প্রসৃত ,অর্ধ সংবৃত , উচ্চ
মধ্য |
ও |
পশ্চাদ , বর্তুল ,অর্ধ সংবৃত , উচ্চ মধ্য |
উচ্চারণ অনুযায়ী ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
কন্ঠ্য ব্যঞ্জন – যে ব্যঞ্জন
ধ্বনি উচ্চারণ করার সময় জিহ্বামূল কন্ঠকে স্পর্শ করে তাদের কণ্ঠ্য ব্যঞ্জন বলে । জিহ্বামূলকে
স্পর্শ করে উচ্চারিত হয় বলে রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী এদের জিহ্বামূলীয় ধ্বনি বলেছেন
। উদাহরণ – ক , খ , গ , ঘ , ঙ
কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জন –
‘হ’ এবং
‘ঃ’ উচ্চারণ করার সময় জিহ্বামূল কণ্ঠনালির পেশি সংকুচিত করে উচ্চারিত হয় , তাই
এদের কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জন বলে ।
তালব্য ব্যঞ্জন
যে-ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার প্রসারিত সম্মুখভাগ শক্ত তালু (hard
palate) স্পর্শ করে সেগুলি তালব্য
ব্যঞ্জনধ্বনি। চলিত বাংলা ভাষায় চ, ছ, জ,
ঝ, শ , য,য় তালব্যব্যঞ্জন। ঞ-র উচ্চারণ সংস্কৃতে ছিল,
বাংলায় এর স্বতন্ত্র উচ্চারণ নেই।
মূর্ধন্য ব্যঞ্জন
যে ব্যঞ্জুনধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগ প্রতিবর্তিত হয়ে (অর্থাৎ উলটে
গিয়ে) তালুর উর্ধ্বতন অংশে আঘাত করে, তাকে মূর্ধন্য ব্যঞ্ঝন বলা হয়। চলিত বাংলায় ট্, ঠ,
ড়, ঢ় আর ড়, ঢ় মূর্ধন্য ব্যঞ্জন। কিন্তু মূর্ধন্য ণ-এর
উচ্চারণ বাংলায় মূর্ধন্য নয়, তা দন্ত্য ন-এর
মতোই।
দন্ত্য ব্যঞ্জন
যে ব্যঞ্ঝনধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার প্রসারিত অগ্রভাগ ওপরের দন্তপংক্তির পশ্চাতে লগ্ন হয়, তাকে
দন্ত্যব্যঞ্জন বলা হয়। যেমন
চলিত বাংলায় ত্, থ, দ,
ধ। (ন্, স দন্ত্য নাম
পেলেও এ দুটি দন্ত্য ব্যঞ্জন নয়।)
দন্তমূলীয় ব্যঞ্জন
যে-ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে জিহ্বার অগ্রভাগ ওপরের দন্তপংক্তির মূলদেশ (দাঁতের গোড়ায়
ঢিবিমতন
জায়গাটিকে) স্পর্শ করে, তাকে দন্তমূলীয় ব্যঞ্জন বলা হয়। বাংলায় তথাকথিত ‘দন্ত্য’ন আর ‘দন্ত্য’স [s] আসলে দন্তমূলীয়
ব্যঞ্জন। জিভ এ দুটি ধ্বনির উচ্চারণে খানিকটা পিছিয়ে দাঁতের গোড়ায় চলে যাচ্ছে। বাংলায় ন , স ,র
, ল দন্ত্যমূলীয় ব্যঞ্জন ।
ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন
যে-ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে ওষ্ঠ আর অধর রুদ্ধ বা সংকুচিত হয়ে ধ্বনিবাহী
বায়ুর নির্গমে বাধা ঘটায় তাকে
ওষ্ঠ্যব্যঞ্জন বলে। চলিত বাংলায়, প্, ফ,
ব, ভ্, ম্ – এই পাঁচটি ওষ্ঠ্য ব্যঞ্জন।
কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জন
যে ব্যঞ্জনের উচ্চারণে কণ্ঠনালীর মধ্যেই ধ্বনিবাহী বায়ুতে ব্যাঘাত ঘটে, তার নাম কণ্ঠনালীয় বর্ণ । চলিত বাংলায় ‘হ’ কণ্ঠনালীয় ব্যঞ্জন।
স্পর্শ ব্যঞ্জন : ক থেকে ম পর্যন্ত প্রথম ২৫ টি
ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হওয়ার সময় ফুসফুস থেকে বের হওয়া বাতাস মুখগহবরের কোন না কোন
জায়গা স্পর্শ করে যায়। এজন্য এই ২৫টি বর্ণকে বলা হয় স্পর্শধ্বনি বা স্পৃষ্টধ্বনি। স্পর্শ বর্ণ উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ু সম্পূর্ণ রূপে বাধা
পায়
স্পর্শ বর্ণগুলিকে পাঁচটি বর্গে ভাগ করা হয় । বর্গের মধ্যে অবস্থান করে বলে এদের
বর্গীয় বর্ণ বলে । প্রতিটি বর্গের প্রথম বর্ণ অনুযায়ী বর্গের নামকরণ করা হয়
। নীচে বর্গের বিভাজন দেখানো হল -
বর্গ |
১ |
২ |
৩ |
৪ |
৫ |
ক – বর্গ |
ক্ |
খ্ |
গ্ |
ঘ্ |
ঙ্ |
চ – বর্গ |
চ্ |
ছ্ |
জ্ |
ঝ্ |
ঞ্ |
ট – বর্গ |
ট্ |
ঠ্ |
ড্ |
ঢ্ |
ণ্ |
ত - বর্গ |
ত্ |
থ্ |
দ্ |
ধ্ |
ন্ |
প – বর্গ |
প্ |
ফ্ |
ব্ |
ভ্ |
ম্ |
উষ্মধ্বনি বা শিশধ্বনি : উষ্ম কথার অর্থ শ্বাস । শ,
ষ, স,
হ - এই চারটি ধ্বনি
উচ্চারণের শেষে যতক্ষণ ইচ্ছা শ্বাস ধরে রাখা যায়, এজন্য এই চারটি ধ্বনিকে
বলা হয় উষ্মধ্বনি । শ,ষ,স উচ্চারন করার সময় শিশ্ দেয়ার মতো করে উচ্চারণ করা যায়, তাই এদের শিষ ধ্বনিও বলে। এগুলোর মধ্যে শ, ষ,
স- অঘোষ অল্পপ্রাণ, হ- ঘোষ মহাপ্রাণ। উষ্মধ্বনি উচ্চারণ করার সময়
শ্বাসবায়ু আংশিক বাধা পায় ।
অন্তঃস্থ বর্ণঃ - অন্তঃস্থ কথার অর্থ মধ্যবর্তী । যে সমস্ত বর্ণ স্পর্শবর্ণ ও উষ্মবর্ণের মধ্যে
অবস্থান করে তাদের অন্তঃস্থ বর্ণ বলে । য , র, ল, ব হল অন্তঃস্থ বর্ণ ।
কম্পনজাত ধ্বনি বা রণিত : ‘র’ ধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহবার
অগ্রভাগ কম্পিত হয়, বা কাঁপে এবং দন্তমূলকে
কয়েকবার আঘাত করে ‘র’ উচ্চারিত হয়। এজন্য ‘র’-কে বলা হয় কম্পনজাত ধ্বনি।
পার্শ্বিক ধ্বনি : ‘ল’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগ
উপরের দাঁতের মাথায় বা দন্তমূলে ঠেকিয়ে জিহবার দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের করে দেয়া হয়।
দু’পাশ দিয়ে বাতাস বের হয় বলে একে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে। ল -কে নৈকট্য ধ্বনিও বলে ।
তরল স্বর – র , ল স্বরধ্বনির তারল্যে উচ্চারিত
হয় । র এবং ল ‘ঋ’ ‘৯’ এর তরল রূপ । তাই এদের তরল স্বর বলে ।
অর্ধ ব্যঞ্জন – যে ব্যঞ্জনধ্বনি স্বরধনির
মতো ব্যঞ্জনধ্বনির বাহক হয়ে নিজে অক্ষর তৈরী করতে পারে তাকে অর্ধব্যঞ্জন বলে । যেমন
– ন , ম , র , ল । এই বর্ণগুলি ব্যঞ্জনধ্বনির
সঙ্গে যুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন গঠন করতে পারে । আবার এরা এককভাবে ব্যঞ্জনধ্বনির মতো
এবং ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে যুক্তভাবে স্বরধ্বনির মতো আচরণ করে বলে এদের অর্ধব্যঞ্জন বলে
।
অল্পপ্রাণ ও মহাপ্রাণ
ধ্বনি : ধ্বনি বিজ্ঞানে প্রাণ কথাটির
অর্থ শ্বাসবায়ু । যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বেশি শ্বাসবায়ুর প্রয়োজন হয় , তাকে মহাপ্রাণ
ধ্বনি বলে। যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় কম শ্বাসবায়ুর প্রয়োজন
হয় ,
তাকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে। ক, গ, চ,
জ- এগুলো অল্পপ্রাণ ধ্বনি। আর খ, ঘ,
ছ, ঝ- এগুলো
মহাপ্রাণ ধ্বনি।
ঘোষ ধ্বনি : ধ্বনি বিজ্ঞানে ঘোষ কথার অর্থ নাদ বা গাম্ভীর্য । যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয়, অর্থাৎ ধ্বনি গাম্ভীর্যের সৃষ্টি হয় , তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে।
উদাহরণ - সমস্ত স্বরবর্ণ , প্রতিটি বর্গের তৃতীয় বর্ণ , চতুর্থ বর্ণ , পঞ্চম
বর্ণ , ড় , ঢ়, য়, হ ,ল ঘোষবর্ণ ।
অঘোষ ধ্বনি যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময়
স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না অর্থাই ধ্বনি গাম্ভীর্যের সৃষ্টি হয় না
তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে।
উদাহরণ – প্রতিটি বর্গের
প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণ , শ , স,ষ , র হল অঘোষ ।
তাড়নজাত ধ্বনি : ‘ড়’ ও ‘ঢ়’ উচ্চারণের সময় জিহবার অগ্রভাগের নিচের দিক বা তলদেশ ওপরের
মূর্ধায় আঘাত করে বা তাড়না করে উচ্চারিত
হয়। এজন্য এদেরকে তাড়নজাত ধ্বনি বলে। মূলত ‘ড’ ও ‘র’ দ্রুত উচ্চারণ করলে যে মিলিত রূপ পাওয়া যায় তাই ‘ড়’ এর
উচ্চারণ। একইভাবে ‘ঢ়’, ‘ঢ’ ও ‘র’-এর মিলিত
উচ্চারণ।
নাসিক্য ধ্বনি : ঙ, ঞ,
ণ, ন, ম- এদের উচ্চারণের সময় এবং ং, ঁ কোন ধ্বনির সঙ্গে থাকলে তাদের উচ্চারণের সময়
মুখ দিয়ে বাতাস বের হওয়ার সময় কিছু বাতাস নাক দিয়ে বা নাসারন্ধ্র দিয়েও বের হয়।
উচ্চারণ করতে নাক বা নাসিক্যের প্রয়োজন হয় বলে এগুলোকে বলা হয় আনুনাসিক বা নাসিক্য
ধ্বনি।
অযোগবাহ বর্ণ : ং (অনুস্বার), ঃ (বিসর্গ)। বর্ণমালার অন্য স্বর ও ব্যঞ্জনের মত এরা নিজে উচ্চারিত হতে পারে না, তাই অন্য স্বর ও
ব্যঞ্জনের সঙ্গে এদের যেন অযোগ রয়েছে।
অথচ এদের দিয়ে উচ্চারণের নানা পরিবর্তন নির্বাহ হয়, সেজন্য এদের অযোগবাহ বর্ণ বলে।
এছাড়া ‘অ’ প্রভৃতি অন্য বর্ণের সঙ্গে ‘যোগ’ রেখেই এদের উচ্চারণ-কার্য নির্বাহ
হয় বলে
এদের নাম অযোগবাহ—এই রকম ব্যাখ্যাও কোন কোন সংস্কৃত
ব্যাকরণে পাওয়া যায়।
পাণিনির মাহেশ্বর সূত্রে
উল্লেখ আছে ‘ন’ যোগ বাহস্থ অর্থাৎ যোগ না করলে বাহিত হতে পারে না । অর্থাৎ অন্য বর্ণের
সংযোগ ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না বলেই অযোগবাহ ।
এরা অন্য বর্ণের আশ্রয়ে
উচ্চারিত হয় বলে এদের আশ্রয়স্থানভাগী বর্ণও বলে ।
ঘৃষ্ট ব্যাঞ্জনঃ- স্পর্শধ্বনি উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ু সম্পূর্ণরূপে বাধা পায় আবার উষ্মধ্বনি
উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ু আংশিক বাধা পায় । স্পর্শধ্বনি উচ্চারণ করতে গিয়ে যদি উষ্ম ধ্বনি উচ্চারিত হয় তাহলে তালু ও জিহ্বার মধ্যে একটি ঘর্ষনের সৃষ্টি হয় তাহলে তাকে ঘৃষ্ট ধ্বনি বলে।
যেমন - চ,ছ,জ,ঝ
দ্বিব্যঞ্জন – দুটি ব্যঞ্জনধ্বনি একসঙ্গে
উচ্চারিত হয়ে একটি ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণ সম্পন্ন করলে তাকে দ্বিব্যঞ্জন ধ্বনি বলে
।
যেমন – ঘ = গ্+হ , চ = ক্+শ অর্থাৎ
সমস্ত মহাপ্রাণ ও ঘৃষ্টধ্বনি মাত্রই দ্বিব্যঞ্জনধ্বনি ।
· বাগযন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনির সৃষ্টি হয়।
· ধ্বনি উচ্চারণের উৎস হলো ফুসফুস।
· দন্ত সক্রিয় বাকপ্রত্যঙ্গ নয়।
· ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বর্ণ বলে।
· যেকোনো ভাষায় ব্যবহৃত বর্ণ সমষ্টিকে সেই ভাষার বর্ণমালা বলে।
· বাংলা বর্ণমালার উৎস ব্রাহ্মীলিপি।
· বাংলা লিপির উৎস ব্রাহ্মী লিপি।
· স্বরধ্বনির লিখিত রূপকে স্বরবর্ণ বলে।
· স্বর বর্ণের পূর্ণরূপ লেখা হয় যখন স্বরবর্ণ স্বাধীন বা নিরপেক্ষ ভাবে লেখা
হয়।
· স্বর বর্ণের প্রাথমিক রূপ স্বর বর্ণের স্বাধীন ব্যবহার কে বলে।
· স্বর বর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে " কার "বলে।
· ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে স্বরধ্বনি যুক্ত না হলে তাকে হসন্ত ধ্বনি বলে।
· "অ" স্বরবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপ
নেই।
· ব্যঞ্জনবর্ণের সংক্ষিপ্ত রূপকে "ফলা " বলে।
· বাংলা বর্ণমালায় ছটি ফলা ব্যবহৃত হয়। ( য – ফলা , র-ফলা , ম-ফলা , ন-ফলা , ব-ফলা , ল-ফলা )
· জিহ্বা কে ধ্বনি তৈরির যন্ত্র বলা হয়।
· Phoneme শব্দের অর্থ ধ্বনিমূল।
· ধ্বনি উৎপাদনের মূল উপকরণ উচ্চারক হল জিহ্বা ও ওষ্ঠ।
· ধ্বনি উৎপাদনের ক্ষেত্র ও উচ্চারণের মূল উপকরণ হলো মুখবিবর, জিহ্বা ও ওষ্ঠ।
· বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বর এর সংখ্যা 25 টি
· বাংলা ভাষায় যৌগিক স্বর জ্ঞাপক বর্ণ দুটো।
· সংবৃত উচ্চারণ কে স্বাভাবিক উচ্চারণ বলা হয়
· সম্মুখ স্বরধ্বনি- ই,এ, অ্যা
· পশ্চাদ্ভাস্থ স্বরধ্বনি- উ,ও,অ
· কেন্দ্রীয় স্বরধ্বনি- আ
· সংবৃত স্বরধ্বনি-ই,উ (উচ্চ স্বরধ্বনি)
· অর্ধ সংবৃত স্বরধ্বনি-এ,ও (উচ্চ-মধ্য স্বরধ্বনি)
· অর্ধ বিবৃত স্বরধ্বনি-অ্যা,অ (নিম্ন মধ্য
স্বরধ্বনি)
· বিবৃত স্বরধ্বনি-আ (নিম্ন স্বরধ্বনি)
· কুন্চিত স্বরধ্বনি- উ,ও,অ
· প্রসারিত স্বরধ্বনি- ই,এ, অ্যা,আ
· নিহিত স্বর বা নিলীন স্বর অ
· যৌগিক স্বরধ্বনি ঐ,ও
· ব্যঞ্জন ধ্বনির লিখিত রূপকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলে।
· ক থেকে ম পর্যন্ত পঁচিশটি বর্ণকে স্পর্শ বর্ণ বা স্পৃষ্ট বর্ণ বলে।
· উচ্চারণ স্থানের দিক থেকে স্পর্শ বর্ণগুলি কে পাঁচটি বর্গে ভাগ করা হয়েছে।
· বর্গের মধ্যে অবস্থান করে বলে স্পর্শ বর্ণগুলি কে বর্গীয় বর্ণ বলা হয়।
· প্রতিটি বর্গের প্রথম বর্ণ অনুযায়ী বর্গের নামকরণ করা হয়েছে।
· বর্গ গুলি হল - ক বর্গ,চ বর্গ ,ট বর্গ,
ত বর্গ, প বর্গ ।
· ক বর্গের বর্ণগুলি কে কন্ঠ বর্ণ বা জিহ্বা মূলিয় বর্ণ বলা হয়।
· ক বর্গের বর্ণ গুলিকে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী জিহ্বামূলীয় বর্ণ বলেছেন।
· ক বর্গের বর্ণগুলি কে স্নিগ্ধ তালব্য বর্ণ বলে।
· চ বর্গীয় বর্ণ গুলিকে বলা হয় তালব্য বর্ণ।
· তালব্য ধ্বনির অপর নাম অগ্রতালু জাতধ্বনি
· ট বর্গের ধ্বনি গুলিকে মূর্ধন্য ধ্বনি বলে।
· মূর্ধন্য ধ্বনির অপর নাম পশ্চাৎ দন্তমূলীয় ধ্বনি
· ত বর্গের বর্ণগুলোকে দন্ত বর্ণ বলে।
· দন্ত্য ধ্বনি গুলিকে অগ্র দন্তমূলীয় ধ্বনি বলা হয়।
· প বর্গের ধ্বনিগুলোকে ওষ্ঠ ধ্বনি বলে।
· উষ্ম ধ্বনি হল- শ, ষ ,স,
হ
· অন্তঃস্থ ধ্বনি হল- য ,র, ল,
ব
· তাড়িত ব্যঞ্জন হল-ড়, ঢ়
· পার্শ্বিক ব্যঞ্জন- ল
· কম্পিত ব্যঞ্জন-র
· অর্ধস্বর- য,ব ( ই , উ , এ , ও )
· তরল স্বর- র, ল
· অর্ধব্যঞ্জন - র, ল
· নাসিক্য ব্যঞ্জন-ঙ, ঞ, ণ,
ন, ম, ৺, ং
· দ্বি ব্যঞ্জন- ঘৃষ্ট ধ্বনি ও মহাপ্রাণ ধ্বনি
· অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জন- বর্গের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণ
· মহাপ্রাণ ব্যঞ্জন- বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ, হ
· অঘোষ বর্ণ- বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণ,শ,ষ,স,ঃ
· ঘোষ বর্ণ- বর্গের তৃতীয় ,চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণ,ড়,ঢ়,য়,হ,ল,
ও সমস্ত স্বরধ্বনি
· স্পর্শ ধ্বনি উচ্চারণ করার সময় শ্বাসবায়ু সম্পূর্ণরূপে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
· উষ্ম ধ্বনি উচ্চারণ করার সময় শ্বাস বায়ু আংশিক বাধাপ্রাপ্ত হয়।
· স্বরবর্ণ - 11টি (সংস্কৃতে 12 টি ছিল বাংলা তে ৯ এর প্রয়োগ নেই)
· ব্যঞ্জনবর্ণ - 39 টি
· মৌলিক স্বরধ্বনি - 7 টি
· যৌগিক স্বরধ্বনি -২টি
· হ্রস্বস্বর স্বরধ্বনি - ৪ টি (অ, ই,উ,ঋ)
· দীর্ঘস্বর স্বরধ্বনি - ৭টি (আ,ঈ,ঊ,এ,ঐ,ও,ঔ)
· মাত্রাহীন - ১০টি(এ,ঐ,ও,ঔ,ঙ,ঞ,ঋ
, ৎ ,ঃ , ং , )
· অর্ধমাত্রা - ৮টি (খ,গ,ঝ,ণ,থ,ধ,প,শ)
· পূর্ণমাত্রা - 32 টি
· কার - 10 টি (অ বাদে )
· স্পর্শবর্ণ - 25 টি
· বাংলা বর্ণমালায় মোট বর্ণ আছে ৫০টি। (স্বরবর্ণ ১১টি + ব্যঞ্জণবর্ণ ৩৯টি)
· প্রকৃত ব্যঞ্জন 35 টি অপ্রকৃত ব্যঞ্জন 4 টি।
· বাংলা বর্ণমালায় মোট স্বরবর্ণ ১১টি (হ্রস্ব স্বর ৪টি + দীর্ঘ স্বর ৭টি)
· বাংলা বর্ণমালায় মোট ব্যঞ্জণবর্ণ ৩৯টি (প্রকৃত ৩৫টি + অপ্রকৃত ৪ টি)
· বাংলা বর্ণমালায় পূর্ণমাত্রাযুক্তবর্ণ আছে ৩২টি (স্বরবর্ণ ৬টি + ব্যঞ্জণবর্ণ
২৬টি)
· বাংলা বর্ণমালায় অর্ধমাত্রাযুক্তবর্ণ আছে ৮টি
· বাংলা বর্ণমালায় মাত্রাহীন বর্ণ আছে ১০টি (স্বরবর্ণ৪টি + ব্যঞ্জণবর্ণ ৬টি)
· বাংলা বর্ণমালায় কার আছে এমন স্বরবর্ণ ১০টি (“অ” ছাড়া)
· বাংলা বর্ণমালায় ফলা আছে এমন ব্যঞ্জণবর্ণ ৬ টি ( ন,
ম, য, র ল,
ব )
· বাংলা বর্ণমালায় স্পর্শধ্বনি/বর্গীয় ধ্বনি আছে ২৫টি (ক থেকে ম পর্যন্ত)
· বাংলা বর্ণমালায় কন্ঠ/জিহবামূলীয়ধ্বনি আছে ৫টি (“ক” বর্গীয়ধ্বনি)
· বাংলা বর্ণমালায় তালব্য ধ্বনি আছে৮টি (“চ” বর্গীয় ধ্বনি + শ,য,
য়)
· বাংলা বর্ণমালায় মূর্ধন্য/পশ্চা ৎদন্তমূলীয় ধ্বনি আছে ৯টি (“ট” বর্গীয়ধ্বনি +
ষ,
র, ড়, ঢ়)
· বাংলা বর্ণমালায় ওষ্ঠ্য ধ্বনি আছে ৫টি (“প” বর্গীয় ধ্বনি)
· বাংলা বর্ণমালায় অঘোষ ধ্বনি আছে ১৪টি (প্রতি বর্গের ১ম ও ২য় ধ্বনি + ঃ, শ,
ষ, স)
· বাংলা বর্ণমালায় ঘোষ ধ্বনি গুলি হল (প্রতি বর্গের ৩য় ও ৪র্থ ধ্বনি + য়,ড়,ঢ়,হ,ল এবং সমস্ত স্বরধ্বনি)
· বাংলা বর্ণমালায় অল্পপ্রাণ ধ্বনি আছে ১৩টি (প্রতি বর্গের ১ম ও ৩য় ধ্বনি + শ, ষ,
স)
· বাংলা বর্ণমালায় মহাপ্রাণ ধ্বনি আছে ১১টি (প্রতি বর্গের ২য় ও ৪র্থ ধ্বনি + হ)
· বাংলা বর্ণমালায় নাসিক্য/অনুনাসিকধ্বনি আছে ৮টি (প্রতি বর্গের ৫ম ধ্বনি + ং, ৺,
)
· বাংলা বর্ণমালায় উষ্ম/শিষ ধ্বনি ৪টি (শ, ষ,
স, (হ)
· বাংলা বর্ণমালায় অন্তঃস্থ ধ্বনি ৪টি (ব, য,
র, ল)
· বাংলা বর্ণমালায় পার্শ্বিক ধ্বনি ১টি (ল)
· বাংলা বর্ণমালায় কম্পনজাত ধ্বনি ১টি (র)
· বাংলা বর্ণমালায় তাড়নজাত ধ্বনি ২টি (ড়, ঢ়)
· বাংলা তাড়নজাত অল্পপ্রাণধ্বনি ‘ড়’ ।
· বাংলা তাড়নজাত মহাপ্রাণধ্বনি ‘ঢ়’ ।
· বাংলা বর্ণমালায় পরাশ্রয়ী ধ্বনি ৩টি (ং, ঃ,
৺)
· বাংলা বর্ণমালায় অযোগবাহ ধ্বনি ২টি (ং, ঃ)
· বাংলা বর্ণমালায় যৌগিক স্বরধ্বনি ২টি (ঐ, ঔ)
· বাংলা বর্ণমালায় খন্ড ব্যঞ্জণ বা খণ্ডিত ব্যঞ্জন ধ্বনি ১ টি (ৎ)
· বাংলা বর্ণমালায় নিলীন ধ্বনি ১টি (অ)
· বাংলা বর্ণমালায় হসন্ত/হলন্ত বর্ণ বলা হয় ক্, খ্,
গ্ এধরণের বর্ণকে
· বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে মাগধী অপভ্রংশ অবহট্ঠ থেকে ।
· মাগধী অপভ্রংশ অবহট্ঠ এর আঞ্চলিক ২
টি রূপ ছিল ।
· প্রাচীন বাংলা ভাষার নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ ছাড়াও আর যে গ্রন্থে পাওয়া যায় –
‘অমরকোষে’র টীকায়
বৌদ্ধ কবি ধর্মদাস রচিত ‘বিদগ্ধ মুখমন্ডল’ গ্রন্থের কয়েকটি কবিতায়
‘সেক-শুভদয়া’য় উদ্ধৃত গানে ও ছড়ায়
· ‘ক্ষতিপূরণ দীর্ঘীভবন’ প্রাচীন বাংলা যুগের বাংলা ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ।
· বাংলা ভাষায় ধ্বনি উচ্চারণে বাকযন্ত্রের
আলজিভ এর কোন ভূমিকা নেই ।
· যে কোন ভাষার ধ্বনির উচ্চারণে বাকযন্ত্রের
উপজিহ্বা ,দাঁতের নিচের পাটি ,খাদ্যনালী র কোন ভূমিকা নেই ।
· বাকযন্ত্রের উর্ধস্থ উচ্চারক হল উপরের ওষ্ঠ ,উপরের দন্ত ,তালু ।
· স্নিগ্ধ তালু থেকে প্রকৃতপক্ষে কোন ধ্বনি উচ্চারিত হয় না ।
· প্লুতস্বরে কমপক্ষে ৩ মাত্রা হবে ।
· বাংলা বর্ণমালায় মিশ্র স্বরধ্বনি বলা
হয় ‘ঋ’ ( র্+ই) কে ।
· নৈকট্য ব্যঞ্জন ধ্বনি য় ।
· র কম্পিত ব্যঞ্জন ধ্বনি কোনটি ?
· ঙ ব্যঞ্জন বর্ণ সর্বদা
স্বরের পরে বসে ।