HEADER ADDS

অজিত দত্তের নোঙর কবিতার ব্যাখ্যা/নবম শ্রেণীর নোঙ্গর কবিতার ব্যাখ্যা

আজ নবম শ্রেণির কবিতা 

                               নোঙর

                                       -অজিত দত্ত

কবি সার্বভৌম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন 
আমি চঞ্চল হে-
সুদূরের পিয়াসী
কবি মন কল্পনার গোলাপি পাখায় ভর করে এক অনির্দ্দেশ্য লোকে যাত্রা করতে চায়।সুদূরের আহ্বানে তিনি সাড়া দিতে চান।
ওগো সুদূর বিপুল সুদূর
তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরী...
কিন্তু হয়ে ওঠে না।
... মোর ডানা নাই,আছি এক ঠাঁই
সে কথা যে যাই পাশরি..
আমাদের আলোচ্য নোঙর কবিতায় সেই ভাবনাই ব্যক্ত হয়েছে। কবিতাটি "শাদা মেঘ কালো পাহাড়"(১৯৭০) কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটি একটি রূপক কবিতা। এখানে 
1. সিন্ধুপার- অনির্দ্দেশ্য লোক, বন্ধনমুক্তি
2. নৌকা - জীবন তরি
3. নোঙর- দায়িত্ত্ব,কর্তব্য,দায়বদ্ধতা
4. ঢেউ- স্বপ্ন,সাধ,আশা,আকাঙ্ক্ষা, বাসনা
5. ভাঁটার শোষণ- বাস্তবের অভিঘাত
6. বাণিজ্য তরী- কবির সৃষ্টিকর্ম,অভিজ্ঞতা,জ্ঞান
7. দাঁড়- নিরন্তর প্রয়াস
8. তট- গন্ডি বদ্ধতার পরিধি।
9. জোয়ার -ভাটা। - জীবনের উত্থান পতন



রোমান্টিকতার সাথে বাস্তব জীবনের সংঘাতের চিত্র ধরা পড়েছে ‘নোঙর’ কবিতায় । ধরা বাঁধা জীবন এবং মায়ার বন্ধন থেকে কবির তীব্র মুক্তি আকাঙ্খা এবং সেই আকাঙ্খা অপূর্ণ থাকার বেদনাই এখানে ফুটে উঠেছে । ক্রমাগত দাঁড় টানার মাধ্যমে অর্থাৎ নিষ্ফল প্রচেষ্টার মাধ্যমে কবি র অতৃপ্তির বেদনা প্রকাশিত হয়েছে। কবি জীবন আবদ্ধ। স্রোতের গতিশীলতা কবির স্থিতিশীলতা কে ব্যঙ্গ করে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় -"কক্ষে মোর রুদ্ধ দুয়ার সে কথা যে যাই পাশরি।" সংকীর্ণতায় আবদ্ধ জীবন অর্থাৎ "ছোটো আমি " "বৃহৎ আমি" তে রূপান্তরিত হতে চায়, কিন্তু হয়ে ওঠে না। না হতে পারার বেদনা "মিছে দাঁড় টানি। 
মিছে দাঁড় টানি " র মাধ্যমে প্রকাশিত। মোহ মুক্ত জীবন কাঙ্খিত, কিন্তু মায়ার বাঁধন থেকে মুক্তি নেই। "জীবন স্মৃতি" তে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন 'আজ খড়ির গন্ডি ঘুচে গেছে, গন্ডি তবু ঘুচে নাই..,' । গ্রন্থি মোচনের চেষ্টার যেমন শেষ নেই, তার আকাঙ্ক্ষা কে যেমন উপেক্ষা করা যায় না, তেমনি গন্ডিবদ্ধ প্রাত্যহিক জীবনের সীমাবদ্ধতা কে অতিক্রম বা লঙ্ঘন করা যায় না। এই অলঙ্ঘ শক্তিই হল নোঙর।
কবির স্বপ্নময়তা এবং প্রবল ইচ্ছা শক্তিকেও ছাপিয়ে গাঢ় হয়ে উঠেছে বিষাদ রস ।