HEADER ADDS

বাক্য গঠনের শর্তগুলি কী কী ।। বাক্য নির্মাণের শর্ত

বাক্য গঠনের শর্তগুলি কী কী  ।। বাক্য নির্মাণের শর্ত 

সাহিত্যদর্পণ’ রচয়িতা বিশ্বনাথ কবিরাজ বলেন “বাক্যাং স্যাদ্ যোগ্যতাকাক্ষাসক্তিযুক্ত পদোচ্চয়ঃ”। অর্থাৎ, যোগ্যতা, আকাঙ্খা ও আসত্তি- এই তিনটি হল বাক্য নির্মাণের শর্ত। অন্যভাবে বললে, যোগ্যতা, আকাঙ্খা ও আসত্তি- এই তিন প্রকার গুণ থাকলে তবেই তাকে বাক্য বলা হবে।

উদ্দেশ্য ও বিধেয় 

গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ

অর্থ অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ 

১) যোগ্যত্য [Compatibility] - বাক্য যে অর্থ প্রকাশ করতে চায় তা যেন বাস্তবতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয়। পদসমষ্টির ভাবগত ও অর্থগত সঙ্গতিকে বলা হয় যোগ্যতা।

যেমন  -

(ক) গরুগুলি আকাশে উড়ছে

(খ) অন্ধ ছেলেটি সাপ দেখে চিৎকার করে উঠল ।

(গ) অমাবস্যার চাঁদের আলোয় পৃথিবী ঝলমল করছে ।  

 উপরের অংশগুলি ব্যাকরণগত ভাবে ঠিক হলেও বাস্তবতা বর্জিত। গরু উড়তে পারে না , অন্ধ দেখতে পায়না , অমাবস্যায় চাঁদের আলো থাকে না , সমস্ত ব্যাপারটা অবাস্তব, আর বাস্তবসম্মত নয় বলেই এগুলি বাক্য নয়।

  তবে, অনেক সময় আপাতদৃষ্টিতে কোন বাক্যের অর্থ বাস্তবসম্মত মনে না হলেও গভীরভাবে অনুধাবন করলে বাক্যটির অন্তর্নিহিত অর্থ পরিস্ফুট হয়। কবি বা সাহিত্যিক কোনো ব্যঞ্জনা সৃষ্টির জন্য বা আলঙ্কারিক প্রয়োগ করলে তখন বাক্য হতে পারে ।

যেমন – (ক) “ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান।”

            (খ) “অচক্ষু সর্বত্র চান , অকর্ণ শুনিতে পান , অপদ সর্বত্র গতাগতি।”

            (গ) “ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল…”

 

২) আকাঙ্খা [Expectancy]- বাক্যের কাজ সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করা। কোনো বাক্য যদি সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে না পারে তবে শ্রোতার আকাঙ্খা পূরণ হয় না এবং সেটিকে বাক্য বলা চলে না। আকাঙ্খা হল বাক্যের সেই শর্ত যা বাক্যের অর্থকে সম্পূর্ণ করার নিশ্চয়তা দেয়। যেমন, “আমি সকালে..” বলে যদি আর কিছু না বলা হয় তবে শ্রোতার আকাঙ্খা পূরণ হয় না। যদি বলা হয় “আমি সকালে হাটতে যাই”- এবারে শ্রোতার আকাঙ্খা পূরণ হল এবং এটি যথার্থ বাক্য হল।

 

৩) আসত্তি [Proximity]- পরস্পর অর্থসম্বন্ধযুক্ত পদসমষ্টিকে অর্থ সম্বন্ধ বজায় রেখে বিন্যাস করাকে আসত্তি বলে ।  বাক্যে একটির পর আরেকটি পদ বসে একটি অর্থবোধক পদক্রম সৃষ্টি হলে তবেই শ্রোতা বক্তার মনের ভাব বুঝতে পারে। পদগুলি উল্টোপাল্টা বসানো হলে বাক্যের উদ্দেশ্যে সিদ্ধ হয় না। যেমন- ‘পরের রবিবার রামের বাবা বাড়ি ফিরবেন’। এই বাক্যটিতে পদগুলি যথাযথভাবে বসেছে বলেই বক্তার মনের ভাব শ্রোতার কাছে বোধগম্য হবে। কিন্তু যদি বলা হত- ‘রামের রবিবার পরের বাবা বাড়ি ফিরবেন’- এই বাক্যটিতে একই পদ ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু কোনো সঙ্গত অর্থ প্রকাশ করতে পারছে না। সুতরাং আসত্তি না থাকলে বাক্যটি কেবল পদসমষ্টি বলে গণ্য করা হবে, সেটিকে বাক্য বলা যাবে না।