HEADER ADDS

গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ

গঠন অনুসারে বাক্যের শ্রেণিবিভাগ

গঠন অনুসারে বাক্য চার প্রকার – (১) সরলবাক্য  (২) জটিলবাক্য (৩) যৌগিক বাক্য  (৪) মিশ্র বাক্য

(১) সরল বাক্য

যে বাক্যে একটিমাত্র উদ্দেশ্য  ও একটিমাত্র বিধেয় থাকে তাকে সরল বাক্য বলে

যেমন -

(১) জল পড়ে।

(২) আমি কাল কলিকাতায় যাব।

(৩) বিশ্বাসদের বড় ছেলে রাম লটারীতে টাকা পেয়েছে।

(৪) রাম, তুমি ও আমি আজ সেখানে যাইব।

৫) আমি স্কুল হইতে ফিরিয়া ভাত খাইয়া বেড়াইতে যাইব।

সরলবাক্য সম্পর্কে কিছু কথা -

1.       সরল বাক্যে একাধিক উদ্দেশ্য-পদ এবং উদ্দেশ্য-পদের প্রসারক থাকতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্য একটিই থাকবে

2.       উদ্দেশ্যপদের সংখ্যা একাধিক হলে তাদের সমষ্টিগতভাবে একটি 'উদ্দেশ্য' বলে গণ্য করা হবে।

চতুর্থ বাক্যে উদ্দেশ্য-পদ তিনটি (রাম, তুমি, আমি) হলেও উদ্দেশ্য সমষ্টিগতভাবে একটি ('আমি') পুরুষকে অনুসরণ করেছে , তাই উদ্দেশ্য একটি

3.       সরল বাক্যের বিধেয় অংশে বিধেয়-ক্রিয়ার প্রসারক ও পরিপূরক হিসাবে একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে, কিন্তু বিধেয়-ক্রিয়া অর্থাৎ সমাপিকা ক্রিয়া একটিই থাকবে।

পঞ্চম বাক্যে একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া (ফিারয়া, খাইয়া, বেড়াইতে) আছে, কিন্তু সমাপিকা ক্রিয়া মাত্র একটি।

(২) জটিল বাক্য

একটি প্রধান খণ্ডবাক্যে এবং এক বা একাধিক অপ্রধান খণ্ডবাক্যের  মিলনে যে বাক্য গঠিত হয় তাকে জটিল বাক্য বলে

যেমন:

(১) যদি তুমি যাও, তবে আমি যাব

এই বাক্যের 'যদি তুমি যাও' এবং 'তবে আমি যাব' এই উভয় অংশেরই নিজ নিজ উদ্দেশ্য (তুমি, আমি) ও বিধেয় (যাও, যাব) আছে, সুতরাং এরা বাক্য হিসাবে গণ্য, তবে এগুলি একটি বৃহৎ বাক্যের অংশ বা খণ্ড বলে এদের পূর্ণ বাক্যের পরিবর্তে খণ্ডবাকা রূপে চিহ্নিত করতে হবে। প্রথম খণ্ডবাক্য 'যদি তুমি যাও' বললে আরও কিছু নেবার আকাঙক্ষা থেকে যায় এবং দ্বিতীয় খণ্ডবাক্য 'তবে আমি যাব'-এর দ্বারা সেই আকাঙ্ক্ষার নিবৃত্তি ঘটে। সুতরাং প্রথম খণ্ডবাক্য আকাঙ্ক্ষাযুক্ত এবং দ্বিতীয় খণ্ডবাক্য প্রথম খণ্ডবাক্যের আকাঙক্ষানিবৃত্তিকারী। প্রথম খণ্ডবাক্য দ্বিতীয় খণ্ডবাক্যের উপর নির্ভরশীল বলে তা অধীন বা অপ্রধান খণ্ডবাক্য এবং দ্বিতীয় খণ্ডবাক্য অধীন খণ্ডবাক্যের আকাক্ষার অবসান ঘটিয়ে সমগ্র বাক্যে অর্থকে সম্পূর্ণ করে বলে সেটি প্রধান খণ্ডবাক্য।

জটিল বাক্যের অপ্রধান খণ্ডবাক্যগুলি প্রধানতঃ তিনপ্রকার:

(১) বিশেষ্যস্থানীয়, (২) বিশেষণস্থানীয়  (৩) ক্রিয়াবিশেষণস্থানীয়


(১) বিশেষ্যস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য -  যে অপ্রধান খণ্ডবাক্য বিশেষ্যের মতো ব্যবহৃত হয়ে প্রধান খণ্ডবাক্যের কোন পদের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হয় তাকে 'বিশেষ্যস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য' বলে

যেমন: (ক) তিনি কোথায় গেলেন, কেউ জানে না - এই বাক্যের 'তিনি কোথায় গেলেন' অংশটি অপ্রধান খণ্ডবাক্য এবং 'কেউ জানে না' এই অংশটি প্রধান খণ্ডবাক্য। অপ্রধান খণ্ডবাক্যটির প্রধান খণ্ডবাক্যের 'জানে না' ক্রিয়ার 'কর্ম' তথা বিশেষ্যরূপে ব্যবহৃত হয়েছে, সুতরাং এটি বিশেষ্যস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য।

 

(২) বিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য -  যে অপ্রধান খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের কোন নামপদের বিশেষণরূপে ব্যবহৃত হয় তাকে 'বিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য' বলে

যেমন:

(ক) 'বঙ্কিম যে শুরুভার লইয়াছিলেন, তাহা অন্য কাহারও পক্ষে দুঃসাধ্য হইত।' –

এই বাক্যের 'বঙ্কিম লইয়াছিলেন' অংশটি অপ্রধান খণ্ডবাক্য এবং বাকি 'তাহা হইত' অংশটি প্রধান খণ্ডবাক্য; এক্ষেত্রে অপ্রধান খণ্ডবাক্যটি প্রধান খণ্ডবাক্যের 'তাহা' পদের বিশেষণস্থানীয়; সুতরাং এটি বিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য।

(খ)  'নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই'

(গ) 'সে কহে বিস্তর মিছা, যে কহে বিস্তর'

(ঘ) 'যে বারান্দায় বসিয়াছিলাম, তাহার নীচে দিয়া বর্ষার তীব্রগামী বারিরাশি মৃদুরব করিয়া ছুটিতেছিল।'

 

(৩) ক্রিয়াবিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য -  যে অপ্রধান খণ্ডবাক্য প্রধান খণ্ডবাক্যের ক্রিয়াকে কোনপ্রকারে বিশেষিত করে তাকে ক্রিয়াবিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য বলে। ক্রিয়াবিশেষণ খণ্ড প্রধান খণ্ডবাক্যের স্থান , সময় , প্রকার , কারণ , শর্ত ,  অবস্থা প্রকাশ করে ।

যেমন:

(ক) তুমি যদি যাও, আমি যাব

এই বাক্যের 'আমি যাব' অংশ প্রধান খণ্ড বাক্য এবং 'তুমি যদি যাও' অংশ অপ্রধান খণ্ডবাক্য। এক্ষেত্রে অপ্রধান খণ্ডবাক্য এক হিসাবে প্রধান খণ্ডবাক্যের সমাপিকা ক্রিয়া 'যাব'-কে বিশেষিত করছে কেননা 'যাব' ক্রিয়াটি যে নিশ্চিত নয় তা অপ্রধান খণ্ডবাক্যের দ্বারাই বিশেষিত হয়েছে। সুতরাং এটি ক্রিয়াবিশেষণস্থানীয় অপ্রধান খণ্ডবাক্য।

(খ) 'আমি যদি সড়কি ওর হাত থেকে খসিয়ে না দিতুম তাহলে তা আমার পেটে ঠিক ঢুকে যেত'

(গ) 'যতদিন সেই আংটি রাজার হাতে না পড়বে, ততদিন রাজা সব ভুলে থাকবেন।'

(ঘ) 'তুমি যদি আমার জননী, মোর কেন মলিন বসনা?'

(৩) যৌগিক বাক্য

পরস্পর-নিরপেক্ষ একাধিক স্বাধীন বাক্য অব্যয়যোগে মিলিত হলে যে  বাক্য গঠিত হয় তাকে যৌগিক বাক্য বলে।

যেমন: -

(ক) 'তার জ্বর হয়েছে, তাই সে স্কুলে যাবে না'

এই বাক্যে যে দুটি সরল বাক্য আছে, বাক্য হিসাবে তারা স্বয়ং- সম্পূর্ণ ও স্বাধীন অর্থাৎ অর্থের পূর্ণতার জন্য তারা অপর কোন বাক্যের আকাঙক্ষা পোষণ করে না। 'তাই' অব্যয়-যোগে এরা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটা দীর্ঘতর অর্থ সম্বন্ধে আবদ্ধ হয়েছে।

যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেকটি বাক্যই স্বতন্ত্র ও অন্যনিরপেক্ষ।

 

(৪) মিশ্র বাক্য

যৌগিক বাক্যে সাধারণত বিভিন্ন সরল বাক্যই একত্র যুক্ত হয়, তবে কখনও কখনও জটিল বাক্যের সঙ্গে সরল বাক্য কিংবা জটিল বাক্যের সঙ্গে যৌগিক বাক্য অথবা একটি জটিল বাক্যের সঙ্গে অপর একটি জটিল বাক্য অব্যয়-দ্বারা যুক্ত হয়। এই জাতীয় বাক্যে বিভিন্ন শ্রেণীর বাক্য মিশ্রিত হয় বলে অনেকে একে স্বতন্ত্র শ্রেণীভুক্ত করে মিশ্র বাক্য নাম দিতে চান।

নীচের উদাহরণগুলি লক্ষ্য কর -

(১) মুক্তা আগে পড়া দেবে, তবে পড়া যদি না-হয় সে জন্মদিনে যেতে পারবে না।

(২) অবনী ও স্বপন রান্না করবে , সেক্ষেত্রে আমার কাজ কী?

৩) যে রোজ আসে আজ সে আসেনি, চিনতে তাই ভুল হয়েছে।

(৪) আমি এসেছি আর সুপ্রকাশ আসছে, যদি পড়া শেষে শতাব্দী আসে তাহলে জয়জিৎ আসবে না।

 -এই উদাহরণগুলি থেকে বুঝতে পারা যায়, যে বাক্যে সরলের সঙ্গে জটিল কিংবা যৌগিক বাক্যের এবং যৌগিক বাক্যের সঙ্গে জটিল বাক্যের মিশ্রণ ঘটেছে ।

তাই বলা যায় , সরল ও যৌগিক , যৌগিক ও যৌগিক , যৌগিক ও জটিল কিম্বা সরল ও জটিল বাক্যের মিশ্রণ হলো মিশ্র বাক্য ।

উদ্দেশ্য ও বিধেয়

বাক্য গঠনের শর্ত