আঞ্চলিক উপন্যাস
টমাস হার্ডির ওয়েসেক্স নভেল্স্ প্রকাশিত হবার পর আঞ্চলিক উপন্যাস বা
Regional Novel স্বীকৃতি পেয়েছে ।
কোনো একটি অঞ্চল যখন এমন স্বতন্ত্র সত্তায় চিহ্নিত হয়ে যায় যে, তার ব্যাপক প্রভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় সেই অঞ্চলের মানুষদের
জীবন-জীবিকা-ভাষা-আচরণ- ভবিতব্য সব কিছু, তখন সেই অঞ্চল ও অঞ্চলসম্ভব মানবজীবনের ইতিবৃত্ত পরিচিতি
পায় আঞ্চলিক উপন্যাসের অভিধায়।
অ্যাব্রাম্স এ-ধরনের উপন্যাসের স্বরূপ সম্বন্ধে মূল্যবান মন্তব্য করেছেন : “The regional novel emphasizes the setting, speech, and customs of a
particular locality, not merely as local colour, but as important conditions affecting
the temperament of characters, and their ways of thinking, feeling and
acting."
বিশেষ কোনো অঞ্চল
বা বিশেষ কোনো অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকার মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না মিশ্রিত করে যে উপন্যাস
রচিত হয় তাকে আঞ্চলিক উপন্যাস বলে।
যেমন- তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের
ধাত্রীদেবতা, হাঁসুলি বাঁকের
উপকথা,
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদ্মানদীর মাঝি, অদ্বৈত মল্লবর্মনের
তিতাস একটি নদীর
নাম , সমরেশ বসুর গঙ্গা , প্রফুল্ল রায়ের পূর্বপার্বতী ।
আঞ্চলিক উপন্যাসের স্বভাবধর্ম লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এই শ্রেণির উপন্যাসে থাকে -
(১) একটি বিশেষ অঞ্চলের ভূ-প্রকৃতি, ধর্ম, ভাষা, জলবায়ু ।
(২) একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষের জীবনসংগ্রাম ।
(৩) একটি বিশেষ অঞ্চলের আচার-আচরণ, ভাষা, সুখ-দুঃখের কাহিনি, রীতিনীতি, সংস্কার, প্রাকৃতিক পটভূমিকা ।
(৪) চিরত্তন মানবজীবনের স্পন্দন ।
(৫) একটি বিশেষ অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পরিমণ্ডল।
'বঙ্গসাহিত্যে উপন্যাসের ধারা' গ্রন্থে আঞ্চলিক উপন্যাসের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে ড. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, 'এই জাতীয় উপন্যাসের বৈশিষ্ট্য হইল অপরিচয়ের রহস্যমণ্ডিত সুদূর ভৌগোলিক ব্যবধানে অবস্থিত কোনও অঞ্চলের বিশিষ্ট জনপ্রকৃতি, সামাজিক রীতিনীতি ও ধর্মবিশ্বাস সংস্কারের
ব্যাপারে চিত্রাঙ্কন অথবা কোনও বিশেষ ধরনের বৃত্তিজীবী গোষ্ঠীর বিশিষ্ট ' জীবনবোধে পরিস্ফুট। আঞ্চলিক সাহিত্যের সংজ্ঞা নির্দেশ কিছুটা দুরূহ। পরিবেশ
সাধারণত সকল মানুষের মনের উপরই প্রভাবশীল। মানবজীবন লীলার স্বাধীন ছন্দও উহার নিগূঢ়, কখনও কখনও দুর্নিরীক্ষ্য নিয়ন্ত্রণের চিহ্ন বহন করিয়া থাকে।'
আরও পড়ুন -