পত্রোপন্যাস কাকে বলে?তার বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা কর ।
পত্রোপন্যাস বা Epistolary Novels-কে বিশেষ ধরনের উপন্যাস না বলে বিশেষ জবানীতে লেখা উপন্যাস বা Third Person novels, এখানে উপন্যাসের কাহিনী বিবৃত করা হয় নির্বাচিত কিছু পত্রের মাধ্যমে।
“পত্রাকারে যখন উপন্যাসের নানা ঘটনা ও তহত্য পরিবেশিত হয় , উপন্যাসের বিভিন্ন চরিত্র
যখন পত্রলিখনের মধ্য দিয়ে উপস্থাপিত হয় এবং আখ্যানবস্তুর বিস্তার ঘটে চরিত্রাবলীর লিখিত
পত্রের মাধ্যমে তখন সেই উপন্যাসকে বলা হয় পত্রোপন্যাস” ।
ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম স্বীকৃত উপন্যাস, স্যামুয়েল রিচার্ডসনের 'পামেলা' এই রীতিতেই রচিত। পরে ‘ক্লারিসা হার্লো' নামে আর একটি উপন্যাসও তিনি এই রীতিতেই রচনা করেন। এই ধরনের
আরো কিছু ইংরেজি উপন্যাস হল স্মলেটের লেখা ‘হামফ্রি ক্লিঙ্কার’, হ্যারিয়েট লী-র 'এরস অব ইনোসেন্স', সুইনবার্নের 'লাভস ক্রস-কারেস্', প্রভৃতি। সাম্প্রতিককালে রচিত এই রীতির উপন্যাসের মধ্যে জন বার্থের ‘লেটার্স’-এর
নাম করা যায়।
পত্ররীতিতে রচিত উপন্যাসের
বৈশিষ্ট্যগুলি হল -
১. পত্রলেখক চরিত্রেরা তাদের নিজ নিজ চিঠির মাধ্যমে ব্যক্তিগত আবেগ-অনুভূতি, মানসিকক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া
এমনভাবে পাঠকসমীপে ব্যক্ত করার সুযোগ পায় যে সহৃদয় পঠক সহজে চরিত্রের সঙ্গে
নৈকট্য বোধ করেন।
২. উত্তম পুরুষ বিবরণদাতার সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে পত্রোপন্যাস লাভ করে এক
বিপুল বিস্তার।
৩. লেখক এ-জাতীয় উপন্যাসে চরিত্রাবলীর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে অনেক বেশি
নৈর্ব্যক্তিক ভূমিকায় থাকতে পারেন।
৪. বিভিন্ন চরিত্রের পত্রের বিষয় ও ভঙ্গিতে যে বৈচিত্র্য থাকে তা উপন্যাসকে
দেয় এক চমৎকার সজীবতা।
৫. একটি বিষয়ে একজনের বক্তব্য শোনার পর অন্য কেউ সে বিষয়ে কি ভাবছে সেই কৌতূহল
পাঠককে উদ্গ্রীব করে রাখে।
৬. প্রতিটি চরিত্র নিজস্ব ভঙ্গী ও ভাষায় আত্মকথনে মগ্ন থাকে বলে রচনাশৈলীর
বৈচিত্র্য প্রদর্শনের সুযোগ থাকে বেশি।
বাংলায় এ ধরনের প্রথম উপন্যাসের নাম 'বসন্তকুমারের পত্র’, লেখক নটেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বাংলা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য য পত্রোপন্যাসগুলি হল—কাজী নজরুল ইসলামের ‘বাঁধনহারা', শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘ক্রৌঞ্চমিথুন', বিভুতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোনুর চিঠি , প্রেমেন্দ্র
মিত্রের প্রিয়তমাসু , বনফুলের ‘কষ্টিপাথর’, তরুণকুমার ভাদুড়ীর, ‘সন্ধ্যাদীপের শিখা', নিমাই ভট্টাচার্যের ‘মেমসাহেব', সন্তোষকুমার ঘোষের 'শেষ নমস্কার / 'শ্রীচরণেষু মাকে' প্রভৃতি। বুদ্ধদেব গুহের ‘মহুয়ার চিঠি’, ‘মহুলসুখার চিঠি’, ‘চান ঘরে গান' প্রভৃতি।
আরও পড়ুন -