HEADER ADDS

অধিকরণ কারক ও শ্রেণিবিভাগ

অধিকরণ কারক ও শ্রেণিবিভাগ 

একটি উদ্দেশ্য এবং একটি বিধেয় নিয়ে বাক্য গঠিত হয় । উদ্দেশ্য বলতে সাধারণত আমরা কর্তাকে বুঝি । বিধেয় বলতে আমরা সমাপিকা ক্রিয়াকে বুঝি ।  এছাড়াও একাধিক পদ বিধেয় ক্রয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যকে দীর্ঘায়িত করে । সেই পদগুলি কোনো না কোনো সম্পর্কে ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্পর্কিত । সেই সম্পর্ককে কারক বলে । কারক ছয় প্রকার – কর্তৃকারক , কর্মকারক , করণ কারক , অপাদান কারক , অধিকরণ কারক , নিমিত্ত কারক ।

এছাড়াও আরও কিছু কিছু পদ বাক্যের মধ্যে থাকে , কিন্তু তাদের সাথে সমাপিকা ক্রিয়ার কোনো সম্পর্ক থাকে না । তাদের সম্পর্ক থাকে বাক্যের অন্তর্গত অন্য কোনো নামপদের সাথে । ব্যাকরণে সেই সম্পর্ককে ‘অকারক’ বলে । অকারক দুই প্রকার – (ক) সম্বন্ধ পদ ও (খ) সম্বোধন পদ ।  

আজ আমরা অধিকরণ কারক সম্পর্কে আলোচনা করবো - 

সংস্কৃত ব্যাকরণে বলা হয়েছে – ‘আধারঃ অধিকরণম্‌’ । অর্থাৎ ক্রিয়ার আধারকে অধিকরণ বলে ।

অধিকরণ কারক : বাক্যে ক্রিয়ার সঙ্গে আধারের সম্পর্ককে   অধিকরণ কারক বলে।

·      সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘কোথায়’ , ‘কখন’ দিয়ে প্রশ্ন করে অধিকরণ কারক পাওয়া যায় ।

·      কোনো স্থান , সময়  , বিষয় বা ভাব ক্রিয়ার আধার হতে পারে ।

·      অধিকরণ চার প্রকার – স্থানাধিকরণ , কালাধিকরণ , বিষয়াধিকরণ ও ভাবাধিকরণ 

 

·      লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে।

·      সুরলোকে বাজে জয়শঙ্খ।”

·      “ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান।”

·      “ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায় ভারতের দিবাকর।”

·      “সকলের এতে সম অধিকার।”

·      “আর কি ভারতে আছে সে যন্ত্র?”

·      তোমার বকুলফুলে, তোমার ও রজনীগন্ধায় কী জাদু লুকানো আছে!”

 

অধিকরণ কারকের শ্রেণিবিভাগ :

 

(১) স্থানাধিকরণ : যে স্থানে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে স্থানাধিকরণ বলে।

1.       রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনে থাকে।

2.       আকাশে চাঁদ উঠেছে।

3.       বাড়ির মঞ্চে প্রথম নাটক হয়েছিল ।

4.       সে স্কুলে যায় ।

5.       সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে ।

স্থানাধিকরণ তিন প্রকার -

 

(ক) ঐকদেশিক - বিরাট স্থানের যে কোন অংশে ক্রিয়া সংঘটিত হলে তাকে ঐকদেশিক আধারাধিকরণ বলে ।

যেমন -

1.       পুকুরে মাছ আছে। (পুকুরের যে কোন এক স্থানে)

2.       বনে বাঘ আছে । (বনের যে কোন এক স্থানে)

3.       আকাশে চাঁদ উঠেছে। (আকাশের কোন এক অংশে)

 

(খ) অভিব্যাপক - উদ্দিষ্টবস্তু যদি সমগ্র আধার ব্যাপ্ত করে বিরাজমান থাকে, তবে তাকে অভিব্যাপক আধারাধিকরণ বলে ।

যেমন-

1.       তিলে তেল আছে । (অর্থাৎ তিলের সারা অংশ ব্যাপী)

2.       বরফে শীতলতা আছে । (অর্থাৎ বরফের সমস্ত অংশ ব্যাপ্ত করে)

3.       মধুতে মিষ্টতা আছে । (অর্থাৎ মধুর সমস্ত অংশ ব্যাপ্ত করে)

 

(গ) সামীপ্যবাচক – সামীপ্য বা নৈকট্য বোঝাতে যে অধিকরণ হয় , তাকে সামীপ্যবাচক অধিকরণ বলে ।

যেমন –

1.       ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে (ঘাটের কাছে)।

2.       দুয়ারে দাঁড়ায়ে প্রার্থী,ভিক্ষা দেহ তারে' (দুয়ারের কাছে)

3.       রাজার দুয়ারে হাতি বাঁধা।

 

(২) কালাধিকরণ : যে কালে বা সময়ে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় তাকে কালাধিকরণ বলে।

 

1.       পুজো সন্ধ্যায় হবে।

2.       সকাল সাতটায় ডাক্তারবাবু বসেন।

 
কালাধিকরণ দুই প্রকার -  (ক) ক্ষণমূলক ও (খ) ব্যাপ্তিমূলক

 

(ক) ক্ষণমূলক বা মুহূর্তাধিকরণ : অতি অল্পসময়ের মধ্যে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হলে ক্ষণমূলক কালাধিকরণ হয়।  

যেমন –

1.       বিকাল পাঁচটায় অনুষ্ঠান আরম্ভ হল।

2.       রবিবার সকালে আপনাদের ওখানে যাচ্ছি।

3.       বিকালবেলায় বিকায় হেলায় সহিয়া নীরব ব্যথা।”

4.       রাত্রি বারোটা পঞ্চাশে মহাষ্টমী পড়েছে।

5.       “চাঁদমুখের মধুহাসে তিলেকে জুড়াই।”

 

(খ) ব্যাপ্তিমূলক : দীর্ঘ সময় ধরে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হলে ব্যাপ্তিমূলক কালাধিকরণ হয়।

যেমন –  

1.       পৌষে প্রবল শীত।”

2.       শীতকালে দিন ছোটো।

3.       “পথে অবিরল ছিটাইয়া জল বর্ষায় গাঁথ মালিকা।”

4.       দিবসে সে ধন হারায়েছি, পেয়েছি আঁধার রাতে।

 

(৩) বিষয়াধিকরণ : যখন কোনো বিষয়কে অবলম্বন করে ক্রিয়া সংঘটিত হয়, তাকে বিষয়াধিকরণ বলে।

 

1.       মেয়েটি রূপে লক্ষী, গুণে সরস্বতী।

2.       সুমন অঙ্কে খুব ভালো।

3.       সে যন্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী ।

4.       তিনি লাঠিতে ওস্তাদ ।

5.       ক্ষমায় সুন্দর, ঔদার্যে বিশাল, স্নেহে বিপুল দক্ষিণ।”

 

(৪) ভাবাধিকরণ : বাক্যের ক্রিয়া যে ভাবকে আশ্রয় করে প্রকাশিত হয় তাকে ভাবাধিকরণ বলে।

 

1.       প্রসন্নচিত্তে তিনি আমাদের বিদায় দিলেন।

2.       তুমি আমায় গভীর চিন্তায় ফেলে দিলে।

3.       সূর্যোদয়ে পদ্ম ফোটে ।

4.       কান্নায় শোক মন্দীভূত হয় ।

 

(৫) অধিকরণে বীপ্সা : বাক্যে অধিকরণ কারকটি একাধিকবার ব্যবহৃত হলে তাকে বলা হয় অধিকরণে বীপ্সা।

1.       গগনে গগনে ভ্রাম্যমান মেঘের দল।

2.       ‘কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি ।’

3.       দেশে দেশে মোর ঘর আছে ।’

4.       শহরে শহরে ছড়িয়ে পড়ল মহামারী।

5.       ঘরে ঘরে বেড়ে উঠছে দেশের ভবিষ্যৎ ।

6.       মেঘে মেঘে সোনা, ও ভাই, যায় না মানিক গোনা।”

7.       “জাগায়েছ অঙ্গে অঙ্গে অপরূপ অপূর্ব পুলক।”

8.       “চরকার ঘর্ঘর পড়শীর ঘর ঘর।

9.       মন্দিরে মন্দিরে শাঁখ মা বলিয়া দেয় ডাক।”

 

আরও পড়ুন -

কর্তৃকারক ও শ্রেণিবিভাগ

কর্মকারক ও শ্রেণিবিভাগ

করণকারক ও শ্রেণিবিভাগ 

অপাদান কারক  ও শ্রেণিবিভাগ

অকারক ও শ্রেণিবিভাগ